Ajker Patrika

কক্সবাজার সৈকতে প্রজননে এসে মারা পড়ছে কচ্ছপ, মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২: ১১
Thumbnail image
প্রজননে এসে মারা পড়ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রজনন মৌসুমে সৈকতে ডিম পাড়তে এসে মারা পড়েছে অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙা সামুদ্রিক কচ্ছপ। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সেন্ট মার্টিন, সোনাদিয়া কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূলে মৃত কচ্ছপ ভেসে আসছে। গত দুই দিনে সমুদ্র উপকূলের টেকনাফের সাবরাং থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সরেজমিন ঘুরে ৬৮টি মৃত কচ্ছপ দেখতে পেয়েছেন।

এর আগে গত বছরও প্রজনন মৌসুমে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট মৃত মা কচ্ছপ ভেসে এসেছিল। এসব কচ্ছপের বেশির ভাগ ছিল অলিভ রিডলি প্রজাতির। অধিকাংশ কচ্ছপের পেটে ডিম ছিল। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর মৃতের হার অস্বাভাবিক বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিমুল ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত দুই দিনে (শনি ও রোববার) ভেসে এসেছে ৬৮টি মৃত কচ্ছপ। তার আগে ৪ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে এসেছে আরও ১৪টি মৃত কচ্ছপ। আর ২৪ দিনে ৮৪টি মৃত কচ্ছপ ভেসে আসার তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, শনিবার টেকনাফের সাবরাং জিরো পয়েন্ট থেকে উখিয়া উপজেলার রূপপতি পর্যন্ত ১২টি এবং আজ (রোববার) দ্বিতীয় দিনে রূপপতি থেকে সোনারপাড়া পর্যন্ত ৪৯টি এবং প্যাঁচার দ্বীপ থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ৭টি কচ্ছপের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া কচ্ছপ সব কটিই অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙা কচ্ছপ জানিয়ে বোরির এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, মৃত কচ্ছপের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী কচ্ছপ রয়েছে। এসব কচ্ছপ এক থেকে দুই দিন বা তারও আগে মারা পড়েছে। কিছু কচ্ছপ এক সপ্তাহ বা ১০-১২ দিন আগে মারা গেছে। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে মৃত কচ্ছপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

মোহাম্মদ শিমুল ভূঁইয়া বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম। এ সময় সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়িতে ডিম দিতে আসে মা কচ্ছপ। কচ্ছপগুলো জেলেদের জালে আটকা পড়ে, সমুদ্রে বড় নৌযানের ধাক্কা বা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা পড়েছে।

অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্র কক্সবাজারের সোনাদিয়া থেকে সেন্ট মার্টিন সমুদ্র উপকূলের সৈকতের বালিয়াড়ি। প্রজনন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চ) এ প্রজাতির কচ্ছপ দল বেঁধে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসে। কিন্তু দুই দশক ধরে এদের প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস এবং আসার পথে নানা বাধায় প্রতিবছর মারা পড়ছে স্ত্রী কচ্ছপ।

প্রজননে এসে মারা পড়ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রজননে এসে মারা পড়ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে কচ্ছপের প্রজনন ও সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করছে নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) নামক একটি সংস্থা। ২০০৩ সালে সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের ৫২ পয়েন্টে সামুদ্রিক মা কচ্ছপ ডিম দিতে আসে। ওই সময় এসব পয়েন্ট মা কচ্ছপের কাছে অত্যন্ত নিরাপদ পয়েন্ট ছিল। তবে এখন এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৩২ ঠেকেছে।

নেকমের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান জানান, মা কচ্ছপের ডিম দেওয়ার সময় সাধারণত নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখন এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে। রাতের বেলায় নির্জন উপকূলে এসে গর্ত তৈরি করে ডিম দেয়। এরপর মা কচ্ছপ ফিরে যায় সাগরে। ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়। এরপর বাচ্চাগুলো গর্ত থেকে বের হয়ে সাগরে ফিরে।

প্রজননে এসে মারা পড়ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রজননে এসে মারা পড়ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থানগুলো কুকুর-শিয়াল বা অন্য কোনো প্রাণী যাতে নষ্ট করতে না পারে তার জন্য পাহারা ও ঘেরা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শফিকুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের সোনাদিয়া থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সৈকতের নির্জন এলাকায় কচ্ছপ দল বেঁধে ডিম দিত। অপরিকল্পিত পর্যটন, অবকাঠামো নির্মাণ, সৈকতে আলোকায়ন, সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়াসহ নানা কারণে কচ্ছপ প্রজনন মৌসুমে বাধা পাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত