Ajker Patrika

‘ম্যানেজ করে’ চলছে ভাটা

  • ১০৮ ইটভাটার মধ্যে ৭২টি অবৈধ
  • ১ মার্চ পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ৬১ ভাটায় অভিযান
  • অভিযানে বন্ধের কয়েক দিনের মাথায় আবারও অনেক ইটভাটার কার্যক্রম চালু
আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম 
অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পর আবারও চালু করা হয়েছে মেসার্স ডব্লিউএএইচ ব্রিকস নামের ইটভাটা। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পর আবারও চালু করা হয়েছে মেসার্স ডব্লিউএএইচ ব্রিকস নামের ইটভাটা। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করে’ বেপরোয়াভাবে চলছে অবৈধ ইটভাটা। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিলেও মালিকপক্ষ তাতে কর্ণপাত করছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় আবারও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করে’ ইটভাটাগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম চালু থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও ভাটার মালিকেরা কয়েক দিন বাদে আবারও তা চালু করছেন। প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র সেগুলো আবারও বন্ধ করা হচ্ছে। ‘ম্যানেজ করার’ অভিযোগ সঠিক নয়।

কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামে মোট ১০৮টি ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করা হয়। এসব ভাটার মধ্যে ৭২টি ইটভাটা অবৈধ। ১ মার্চ পর্যন্ত চলতি মৌসুমে জেলায় ৬১টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে অভিযানে ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অভিযানে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলেও প্রায় সবই আবার চালু করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি ৭২টি ইটভাটার মধ্যে দুটি ভাটায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে রাজারহাটের সিন্দুরমতিতে অবস্থিত মেসার্স ডি কে ব্রিকস নামক ইটভাটা বন্ধ করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বর্তমানে সেই ভাটাটি আবারও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৯ জানুয়ারি একই মালিকের একই নামে সদরের টগরাইহাটে অবস্থিত ইটভাটায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভাটার আগুন নিভিয়ে কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেন। কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে বর্তমানে ইটভাটাটি চলমান রয়েছে।

এদিকে গত ১ ফেব্রুয়ারি নাগেশ্বরীর নিলুরখামার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেসার্স ডি এ ব্রিকস নামের ইটভাটার আগুন নিভিয়ে ভাটাটির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই আবারও চালু হয় ভাটাটি। অবৈধ ওই ভাটাটিতে এখনো ইট পোড়ানো হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলার ৯ উপজেলাতেই অভিযানে বন্ধ করে দেওয়া অবৈধ ইটভাটাগুলো আবারও চালু করেছেন মালিকেরা। নিয়মিত ইট পোড়ানো হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইটভাটার চিমনি দিয়ে ধোঁয়া উড়ছে। ইট পুড়িয়ে তা বিক্রিও চলছে। অভিযানের পরও এসব ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।

জানতে চাইলে রাজারহাট ইউএনও আল ইমরান বলেন, ‘উপজেলায় দুটি ইটভাটা অবৈধ। দুটোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।’ উপজেলার সিন্দুরমতি এলাকায় এখনো একটি অবৈধ ইটভাটা চলমান থাকার তথ্য জানালে ইউএনও বলেন, ‘তাহলে তারা আবারও চালু করেছে। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

তবে ইটভাটা মালিকেরা জানান, মৌসুমের মাঝপথে প্রশাসনের অভিযানে তাঁরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত। আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আদালতের দেওয়া এক মাসের সময়ের মধ্যে তাঁরা ভাটা শেষ করতে চান।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘সীমিত সাধ্যের মধ্যে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার পর আবারও চালু করা হচ্ছে। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করার বিষয়টি সঠিক নয়। অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরে আবার চালু করে থাকলে সেটা আমাদের জানার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণেরও এগিয়ে আসতে হবে। তারপরও আমি ইউএনওদের বলব আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে। প্রয়োজনে এসব অবৈধ ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চূড়ান্ত হচ্ছে সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, শিগগির ঘোষণা

প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ধরা পড়া সেই নেতাকে বহিষ্কার করল ছাত্রশিবির

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

ফ্রিতে নৌকা না পেয়ে ভূমি অফিস সহকারীকে মারধর এসপির

এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার হারাবে বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত