ফেরি চালু, প্রাণ ফিরেছে আরিচায়

শহিদুল ইসলাম, শিবালয় (মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২১, ১৬: ২২

দীর্ঘ দু দশক পর আবার চালু হয়েছে আরিচা–কাজিরহাট রুটের ফেরি। এর মধ্য দিয়ে চেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে আরিচা ঘাট। নতুন করে প্রাণ পাওয়া এ ঘাট আরিচা-কাজিরহাটসহ দেশের উত্তারাঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণসঞ্চার করেছে।

এক সময় রাজধানী ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের মানুষের আরিচা ঘাট এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এ কারণে রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ছিল আরিচা ঘাট। বিভিন্ন যানবাহনের আগণিত যাত্রী, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বোর্ডিং, ফেরিওয়ালা, হকারদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতিতে গমগম করত ঘাট এলাকা। সারিবদ্ধ বিভিন্ন যানবাহন, ফেরি-লঞ্চের ভেঁপু ও সার্চলাইটের আলো এক অন্য জগতের আবহ তৈরি করত। প্রতি ঈদের আগে-পরে এ ঘাটে যানবাহনের বাড়তি চাপে সৃষ্ট জট দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। কোনো-কোনো ক্ষেত্রে যানবাহনের লাইন লম্বা হতে হতে মহাসড়কের ১০–১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতো। যানজটে আটকে পড়া গাড়িতে সন্তানপ্রসব, মৃত্যু ইত্যাদির ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। এই ঘাট এলাকা নিয়েই লেখা হয়েছে বিস্তর গল্প। টেলিভিশনে প্রচারিত অনেক নাটকে আরিচা ঢুকে পড়ত স্বমহিমায়।

এক সময় আরিচা ঘাট ছিল সংবাদমাধ্যমের খবরের অন্যতম জোগানদাতা। যানবাহন সম্পর্কিত বিষয়াদি তো রয়েছেই, ছিল ফেরির তেল চুরি, জুয়া, মাদক পাচার, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপকর্মের খবর। এমনকি ঘাট এলাকার রেস্তোরাঁয় খাসির মাংসের বদলে কুকুরের মাংস বিক্রির খবরও বেরিয়েছিল বিভিন্ন পত্রিকায়। মানুষের ভোগান্তি থেকে শুরু করে ঘাট এলাকার নানা রকমারি ঘটনা খবর হয়ে এসেছে বারবার। কিন্তু ১৯৯৮ সালের পর থেকেই চেনা এই চিত্র বদলে যায়।

মানুষের ভোগান্তি কমাতে যমুনা নদীর ওপর ১৯৯৮ সালের জুন মাসে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে বন্ধ হয় আরিচা-নগরবাড়ী রুটের ফেরি সার্ভিস। যমুনার নাব্যতা সংকটে ২০০১ সালের ২২ মার্চ আরিচা ঘাটের লঞ্চ ও ফেরি ঘাট সরিয়ে প্রায় সাত কিলোমিটার ভাটিতে পাটুরিয়া ঘাটে নেওয়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহন আরিচার পরিবর্তে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার শুরু করে। সে থেকেই এক রকম নিস্তব্ধতা নেমে আসে এ ঘাটে।

বর্তমান সরকার দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বিশেষ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় এ রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করেন। দুই প্রান্তে দুটি ঘাট ও ছোট-বড় দুটি ফেরি দিয়ে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে দুটি রোরো ও দুটি কে–টাইপ ফেরিযোগে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের দুই শতাধিক যানবাহন পারাপার হচ্ছে বলে ফেরি সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের ২৮ জেলার মানুষের সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও মৃতপ্রায় আরিচা ঘাটের নবযাত্রা শুরু হয়েছে।

ঘাট চালুর বিষয়ে আরিচা বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘অনেক বছর পর নতুন করে আরিচা রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর ফলে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও লোকসমাগম বাড়ছে। বাড়তি লোকজনের চাহিদা মেটাতে ঘাট এলাকায় নানা ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের কেনা-বেচাও অনেকাংশে বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত