দেশে কমপক্ষে তিন-সাড়ে তিন কোটি মানুষ সব সময়ই রয়েছে যারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। এদের অনেকেই আওয়ামী লীগ করলেও হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পক্ষে ছিলেন না। তাঁরা হয়তো ভয়ে চলমান অপশাসনের প্রতিবাদ করতে পারেননি, কিন্তু তাঁরা মনে মনে হাসিনা লীগকে অপছন্দ ঠিকই করেছেন।
মাসুদ কামাল
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি পারবে না, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কি হবে না—এ নিয়ে গরম এখন রাজনীতির মাঠ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে দাবিদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি তো আরও একধাপ বেশি। আওয়ামী লীগকে কেবল নির্বাচনের বাইরে রাখাই নয়, দাবি তাদের দেশের প্রাচীনতম এই দলটিকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার। এর বিপরীতে দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে উল্টো কথা।
তারা কোনো রাজনৈতিক দলকেই নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। তারা চায় আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলই আগামী নির্বাচনে অংশ নিক। এমন পরস্পরবিরোধী দুই দাবির মাঝখানে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা কোন দিকে যাবে? কী সিদ্ধান্ত নেবে তারা? অথচ তাদের সিদ্ধান্তই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারাই রয়েছে সরকারে। সিদ্ধান্তটি নিতে হবে তাদেরই।
এ রকম একটা দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো মতামত প্রকাশিত হচ্ছিল না। কেউ কিছু বলছিলেন না। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের পরিবর্তনের কথা যখন এল, সেখানে খুন-গুম-নির্যাতনের মতো অপরাধের কারণে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান যখন রাখা হলো, তখন যেন মনে হচ্ছিল—এই সরকারও বুঝি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায়। কিন্তু সেসব জল্পনা-কল্পনায় ছেদ ঘটল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি কথায়। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করেই জানান, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এর মধ্যেই নেওয়া হয়ে গেছে। নির্বাচন করতে পারবে আওয়ামী লীগ। আর এমন সিদ্ধান্তের পেছনে বিএনপিই যে মূল ভূমিকা পালন করেছে, সেটাও জানান তিনি। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধকরণ চায় না, সেই সঙ্গে সব দল নির্বাচনে আসুক, এটাও তারা চায়। প্রধান উপদেষ্টা এমন কথাও বলেছেন—রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদা অনুসারেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
এখানে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে, বিএনপির মতো অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও কি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে চায়? এই বিষয়টা মনে হয় অস্পষ্ট। উল্লেখ করার মতো অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রকাশ্যে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পক্ষে বলতে শোনা যায়নি। ছাত্রদের দাবির প্রতিধ্বনিই বরং অন্য অনেক দলের মুখে উচ্চারিত হতে দেখা গেছে। ফলে একটা প্রশ্ন অবধারিতভাবেই সামনে চলে এসেছে—বিএনপি কেন আওয়ামী লীগকে মাঠে রাখতে চাইছে?
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে যার সামান্য কিছু ধারণাও আছে, সে জানে—বিএনপির জন্মের পর থেকেই তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একসঙ্গে রাজপথে ছিল, তখনো তারা ছিল পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। আর গত ১৫ বছরে তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার। দলটিকে মাঠেই নামতে দেয়নি, লাখ লাখ মামলা দিয়ে বিএনপির একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের দৌড়ের ওপর রেখেছে। দলের এমন কোনো নেতা ছিল না, যার বিরুদ্ধে ১০-১৫টা মামলা ছিল না। একপর্যায়ে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, যিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, যিনি বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন, তাঁকেও অভিহিত করা হয়েছিল ‘পাকিস্তানের চর’ হিসেবে। এই সবই করেছেন আওয়ামী লীগ ও এর নেতারা। এত কিছুর পরও সেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পপুলার দাবিটির বিরোধিতা করছে বিএনপি! কিন্তু কেন? আমার বিবেচনায় ঠিক এই জায়গাটিতেই বিএনপি দেখিয়েছে তাদের পলিটিক্যাল ম্যাচিউরিটি।
একটি বিষয় লক্ষণীয়, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এমন এক সময়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি করেছেন, যখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করার মতো কোনো নেতা প্রকাশ্যে নেই। দেশের কোথাও, এমনকি অতি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আওয়ামী লীগ বা তার কোনো অঙ্গসংগঠন তাদের অফিসটি পর্যন্ত খোলার সাহস পাচ্ছে না। জন্মের শুরু থেকে এ পর্যন্ত, কখনো ঐতিহ্যবাহী এই দলটি এত বেকায়দায় পড়েনি। চাইলেই এখন নিষিদ্ধের ঘোষণাটি দিয়ে দেওয়া যায়। এত অনুকূল পরিবেশ পাওয়া সত্ত্বেও বিএনপি কেন এই সুযোগটা নিচ্ছে না? এমনকি পরিস্থিতি এখন এতটাই অনুকূল যে বিএনপিকে চাইতেও হবে না, ছাত্ররাই চাইছেন, বিএনপি কেবল চুপ করে থাকলেই হয়। তারপরও বিএনপি কেন বিরোধিতা করছে নিষিদ্ধের? কেন তারা নির্বাচনেও চাইছে আওয়ামী লীগকে?
এটা কিন্তু বিএনপির কোনো মহানুভবতা নয়। বরং একটি সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক পদক্ষেপ। বিএনপির হিসাবটা পরিষ্কার—তারা মনে করে নির্বাচন অবাধ হলে, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী যারাই থাক, তারাই বিজয়ী হবে। সেখানে যদি আওয়ামী লীগ তাদের পূর্ণশক্তি নিয়ে থাকে, তবু। আর বিপরীত দিকে আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনের বাইরে থাকে, তাহলে তাদের বাড়তি কোনো লাভ হওয়ার বিষয় নেই। তখন আওয়ামী লীগের ভোটগুলো বিভিন্ন জায়গায় ভাগ হয়ে যাবে। তখন হয়তো তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ দলগুলো কিছু অপ্রত্যাশিত ভোট পাবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না থাকলে বিএনপির লাভ না হলেও ক্ষতির কিছু আশঙ্কা থাকবে। লোকে তখন এ নির্বাচনকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করবে। বলবে, বিএনপি ‘একতরফা’ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেও এ ধরনের একটা প্রচারণাকে বেশ জোরেশোরে চালাবে।
কেবল নির্বাচনই নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিরোধিতা করার যে কৌশল বিএনপি নিয়েছে, সেটাও আমার কাছে খুবই সুবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে হয়। কেবল জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ই নয়, আগের বছরগুলোতেও আওয়ামী লীগ সরকার কি দেশজুড়ে গণ-অত্যাচার করেনি? অবশ্যই করেছে। সেগুলো গোপন কিছু ছিল না, খুবই দৃশ্যমান ছিল। সেইসব ঘটনারই বিচার হওয়া উচিত। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। এর পাশাপাশি পুরো দেড় দশক ধরে তারা যে অবাধ লুটপাট করেছে, সেগুলোরও বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু এসব অপরাধের কারণে যদি পুরো দলটিকেই নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, তাতে কিন্তু সেই প্রত্যাশিত বিচারগুলো আড়ালে পড়ে যাবে। দলের অপরাধী নেতারা তখন দল নিষিদ্ধের ডামাডোলের নিচের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, দেশে কমপক্ষে তিন-সাড়ে তিন কোটি মানুষ সব সময়ই রয়েছে, যারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। এদের অনেকেই আওয়ামী লীগ করলেও হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পক্ষে ছিলেন না। তাঁরা হয়তো ভয়ে চলমান অপশাসনের প্রতিবাদ করতে পারেননি, কিন্তু তাঁরা মনে মনে হাসিনা লীগকে অপছন্দ ঠিকই করেছেন। এখন দল নিষিদ্ধ করতে গেলে সেই বিশাল জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রকারান্তরে। এই তিন-সাড়ে তিন কোটি মানুষকে আপনি তো বঙ্গোপসাগরে নিয়ে ফেলে দিতে পারবেন না! আসলে কোনো রাজনৈতিক দলকে গায়ের জোরে নিষিদ্ধ করা গেলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। হাসিনার মতো স্বৈরশাসক ১৫ বছর চেষ্টা করেও জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি, জামায়াত বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। একই ঘটনা আরও বিবর্ধিত আকারে ঘটবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে গেলে। বয়সের কারণে অনভিজ্ঞ ছাত্ররা তা বুঝতে না পারলেও বিএনপি সেটা ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি পারবে না, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কি হবে না—এ নিয়ে গরম এখন রাজনীতির মাঠ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে দাবিদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি তো আরও একধাপ বেশি। আওয়ামী লীগকে কেবল নির্বাচনের বাইরে রাখাই নয়, দাবি তাদের দেশের প্রাচীনতম এই দলটিকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার। এর বিপরীতে দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে উল্টো কথা।
তারা কোনো রাজনৈতিক দলকেই নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। তারা চায় আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলই আগামী নির্বাচনে অংশ নিক। এমন পরস্পরবিরোধী দুই দাবির মাঝখানে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা কোন দিকে যাবে? কী সিদ্ধান্ত নেবে তারা? অথচ তাদের সিদ্ধান্তই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারাই রয়েছে সরকারে। সিদ্ধান্তটি নিতে হবে তাদেরই।
এ রকম একটা দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো মতামত প্রকাশিত হচ্ছিল না। কেউ কিছু বলছিলেন না। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের পরিবর্তনের কথা যখন এল, সেখানে খুন-গুম-নির্যাতনের মতো অপরাধের কারণে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান যখন রাখা হলো, তখন যেন মনে হচ্ছিল—এই সরকারও বুঝি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায়। কিন্তু সেসব জল্পনা-কল্পনায় ছেদ ঘটল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি কথায়। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করেই জানান, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এর মধ্যেই নেওয়া হয়ে গেছে। নির্বাচন করতে পারবে আওয়ামী লীগ। আর এমন সিদ্ধান্তের পেছনে বিএনপিই যে মূল ভূমিকা পালন করেছে, সেটাও জানান তিনি। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধকরণ চায় না, সেই সঙ্গে সব দল নির্বাচনে আসুক, এটাও তারা চায়। প্রধান উপদেষ্টা এমন কথাও বলেছেন—রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদা অনুসারেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
এখানে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে, বিএনপির মতো অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও কি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে চায়? এই বিষয়টা মনে হয় অস্পষ্ট। উল্লেখ করার মতো অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রকাশ্যে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পক্ষে বলতে শোনা যায়নি। ছাত্রদের দাবির প্রতিধ্বনিই বরং অন্য অনেক দলের মুখে উচ্চারিত হতে দেখা গেছে। ফলে একটা প্রশ্ন অবধারিতভাবেই সামনে চলে এসেছে—বিএনপি কেন আওয়ামী লীগকে মাঠে রাখতে চাইছে?
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে যার সামান্য কিছু ধারণাও আছে, সে জানে—বিএনপির জন্মের পর থেকেই তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একসঙ্গে রাজপথে ছিল, তখনো তারা ছিল পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। আর গত ১৫ বছরে তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার। দলটিকে মাঠেই নামতে দেয়নি, লাখ লাখ মামলা দিয়ে বিএনপির একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের দৌড়ের ওপর রেখেছে। দলের এমন কোনো নেতা ছিল না, যার বিরুদ্ধে ১০-১৫টা মামলা ছিল না। একপর্যায়ে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, যিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, যিনি বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন, তাঁকেও অভিহিত করা হয়েছিল ‘পাকিস্তানের চর’ হিসেবে। এই সবই করেছেন আওয়ামী লীগ ও এর নেতারা। এত কিছুর পরও সেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পপুলার দাবিটির বিরোধিতা করছে বিএনপি! কিন্তু কেন? আমার বিবেচনায় ঠিক এই জায়গাটিতেই বিএনপি দেখিয়েছে তাদের পলিটিক্যাল ম্যাচিউরিটি।
একটি বিষয় লক্ষণীয়, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এমন এক সময়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি করেছেন, যখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করার মতো কোনো নেতা প্রকাশ্যে নেই। দেশের কোথাও, এমনকি অতি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আওয়ামী লীগ বা তার কোনো অঙ্গসংগঠন তাদের অফিসটি পর্যন্ত খোলার সাহস পাচ্ছে না। জন্মের শুরু থেকে এ পর্যন্ত, কখনো ঐতিহ্যবাহী এই দলটি এত বেকায়দায় পড়েনি। চাইলেই এখন নিষিদ্ধের ঘোষণাটি দিয়ে দেওয়া যায়। এত অনুকূল পরিবেশ পাওয়া সত্ত্বেও বিএনপি কেন এই সুযোগটা নিচ্ছে না? এমনকি পরিস্থিতি এখন এতটাই অনুকূল যে বিএনপিকে চাইতেও হবে না, ছাত্ররাই চাইছেন, বিএনপি কেবল চুপ করে থাকলেই হয়। তারপরও বিএনপি কেন বিরোধিতা করছে নিষিদ্ধের? কেন তারা নির্বাচনেও চাইছে আওয়ামী লীগকে?
এটা কিন্তু বিএনপির কোনো মহানুভবতা নয়। বরং একটি সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক পদক্ষেপ। বিএনপির হিসাবটা পরিষ্কার—তারা মনে করে নির্বাচন অবাধ হলে, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী যারাই থাক, তারাই বিজয়ী হবে। সেখানে যদি আওয়ামী লীগ তাদের পূর্ণশক্তি নিয়ে থাকে, তবু। আর বিপরীত দিকে আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনের বাইরে থাকে, তাহলে তাদের বাড়তি কোনো লাভ হওয়ার বিষয় নেই। তখন আওয়ামী লীগের ভোটগুলো বিভিন্ন জায়গায় ভাগ হয়ে যাবে। তখন হয়তো তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ দলগুলো কিছু অপ্রত্যাশিত ভোট পাবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না থাকলে বিএনপির লাভ না হলেও ক্ষতির কিছু আশঙ্কা থাকবে। লোকে তখন এ নির্বাচনকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করবে। বলবে, বিএনপি ‘একতরফা’ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেও এ ধরনের একটা প্রচারণাকে বেশ জোরেশোরে চালাবে।
কেবল নির্বাচনই নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিরোধিতা করার যে কৌশল বিএনপি নিয়েছে, সেটাও আমার কাছে খুবই সুবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে হয়। কেবল জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ই নয়, আগের বছরগুলোতেও আওয়ামী লীগ সরকার কি দেশজুড়ে গণ-অত্যাচার করেনি? অবশ্যই করেছে। সেগুলো গোপন কিছু ছিল না, খুবই দৃশ্যমান ছিল। সেইসব ঘটনারই বিচার হওয়া উচিত। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। এর পাশাপাশি পুরো দেড় দশক ধরে তারা যে অবাধ লুটপাট করেছে, সেগুলোরও বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু এসব অপরাধের কারণে যদি পুরো দলটিকেই নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, তাতে কিন্তু সেই প্রত্যাশিত বিচারগুলো আড়ালে পড়ে যাবে। দলের অপরাধী নেতারা তখন দল নিষিদ্ধের ডামাডোলের নিচের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, দেশে কমপক্ষে তিন-সাড়ে তিন কোটি মানুষ সব সময়ই রয়েছে, যারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। এদের অনেকেই আওয়ামী লীগ করলেও হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পক্ষে ছিলেন না। তাঁরা হয়তো ভয়ে চলমান অপশাসনের প্রতিবাদ করতে পারেননি, কিন্তু তাঁরা মনে মনে হাসিনা লীগকে অপছন্দ ঠিকই করেছেন। এখন দল নিষিদ্ধ করতে গেলে সেই বিশাল জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রকারান্তরে। এই তিন-সাড়ে তিন কোটি মানুষকে আপনি তো বঙ্গোপসাগরে নিয়ে ফেলে দিতে পারবেন না! আসলে কোনো রাজনৈতিক দলকে গায়ের জোরে নিষিদ্ধ করা গেলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। হাসিনার মতো স্বৈরশাসক ১৫ বছর চেষ্টা করেও জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি, জামায়াত বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। একই ঘটনা আরও বিবর্ধিত আকারে ঘটবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে গেলে। বয়সের কারণে অনভিজ্ঞ ছাত্ররা তা বুঝতে না পারলেও বিএনপি সেটা ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের প্রস্তাবে চালকদের রাস্তায় নেমে আসা এবং শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবরোধে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
১৭ মিনিট আগেহুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওনের ছেলে নিষাদ হুমায়ূনের একটা ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। বেশ মজা পেলাম। সত্যি বললে মজার চেয়েও ছোট্ট বাচ্চার কথায় ভাবনার উদ্রেক হলো। চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত হলো।
৮ ঘণ্টা আগেপরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
৮ ঘণ্টা আগেবগুড়ার শিবগঞ্জে ৪২০ টাকা কেজি দরে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে। আজকের পত্রিকায় খবরটি দেখা গেছে ১৮ নভেম্বর। এই দামে বেচাকেনাও হচ্ছে। ক্রেতারাও নাকি এই দামে আলু কিনতে পেরে সন্তুষ্ট!
৮ ঘণ্টা আগে