স্থায়ী জায়গার অভাবে বিলুপ্তির পথে কুয়াকাটার শুঁটকি পল্লী

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
Thumbnail image

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর, মহিপুর ও কুয়াকাটায় উৎপাদিত হয় প্রায় অর্ধশত প্রজাতির সামুদ্রিক শুঁটকি। চাহিদা ভালো হওয়ায় প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার শুটকি বিক্রি হয় সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। তবে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য স্থায়ী জায়গা না থাকা ও আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগায় ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে জেলার শুঁটকি পল্লীগুলো। 

আলিপুর, মহিপুর, কুয়াকাটা, লেবুর চর, গঙ্গামতির চর, গোড়াখাল ও রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ এলাকাসহ বিভিন্ন চরে শতাধিক শুঁটকি পল্লী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এসব পল্লীতে প্রায় ২-৩ হাজার মানুষ কাজ করেন। মৌসুমের শুরুতেই এসব এলাকার বিভিন্ন স্পটে ১০-১২ জন ব্যবসায়ী ছোট্ট ঝুপড়ি ও মাচায় লইট্টা, ফাইসা, ছুড়ি, পোমা, রুপচাঁদা, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ির শুটকি তৈরি করেন। বছরের ৪ থেকে ৫ মাস শুঁটকি উৎপাদন করা হয় এসব মাচায়। 

সরজমিনে কুয়াকাটায় গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াকাটা মূল সৈকতের পশ্চিমে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরেই রয়েছে দুটি শুটকি পল্লী। সেখানে ছোট ছোট ঝুপড়িতে ১২ থেকে ১৫ জন ব্যবসায়ী বাস করছেন। কেউ মাছ আহরণ শেষে করছেন ধোয়ার কাজ, কেউ বড় মাছ কাটছেন, কেউ বা পরিষ্কার মাছে লবন মিশিয়ে মাচানের উপরে বিছিয়ে শুকাতে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ শুকনো শুঁটকি ভরছেন বস্তায়। বস্তায় ভরা এসব শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যুক্ত আছেন এই কাজে। কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেছে কাজ করছেন শিশুরাও। 

শুটকি উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত ছোট ঝুপড়িশুঁটকি ব্যবসায়ী আ. হক মিয়া বলেন, ‘এ ব্যবসায় আমি ১৪ বছর আইজ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যায়গা পাইনাই। বছরে ৪ মাস ব্যবসা করি অক্টোবরে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত। সাগরে নাই মাছ অন্যদিকে নাই কোনো স্থায়ী যায়গা এরকম আর কতকাল। লস দিয়াই যাইতে হইবো, কয়েকদিন আগে পাশের ঘরের সিদ্দিক মৃধা ৫ লাখ লস দিয়া চইলা গেছে।’ 

আরেক ব্যবসায়ী শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘গত বছর ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মাছ কিনছি, ২০ লাখ টাকা লাভ করছি। এবার শুরু থেইকাই লস। অক্টোবরের ২০ তারিখ হইতে এ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ কিনছি লাখ দুই লাভ হইতে পারে।’ 

শুটকি ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, ‘আমাদের সরকারের কাছে আবেদন আমাদের এই শুঁটকি ব্যবসার স্থায়ী কোন জায়গা করে দেয়।’ 

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘ইতিমধ্যে ডিসি সাহেবের সাথে কথা হয়েছে খালগোড়ায় শুঁটকি পল্লীর জন্য স্থায়ী জায়গা দেওয়া হবে।’ 

খোলা জায়গায় চলছে শুটিক শুকানোর কাজআলিপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আলিপুর মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করে সারাদেশে সরবরাহ করে। কিন্তু আলিপুর, মহিপুর ও কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই এসব ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছে কক্সবাজারে যে আধুনিক একটি শুটকি পল্লী হচ্ছে ওরকম যেন এই এলাকায় একটি শুঁটকিপল্লী নির্মাণ করা হয়। ইতিমধ্যে তাদের এই প্রস্তাব আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি আশা করি এটি বাস্তবায়িত হলে এই এলাকায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং শুঁটকি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত