ক্ষুব্ধ তারেক, ২ দিনের মধ্যে কমিটির নির্দেশ

খান রফিক, বরিশাল
Thumbnail image

বরিশাল নগর বিএনপিকে মাত্র দুই দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করার তাগিদ দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতৃত্ব গঠনে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দ্রুত কেন্দ্রে জমা দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। 

জানা গেছে, তিন দফা চেষ্টার পর গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করার সুযোগ পায় নগর বিএনপি। ওই সভায় নগরীতে দখল-বাণিজ্য নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এদিকে নগর বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকায় বসে তিনজন মিলে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করলে নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এর আগে গত ৭ জুলাই তিন সদস্যবিশিষ্ট নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। একই দিন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক পত্রে দুই সপ্তাহের মধ্যে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নবগঠিত আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করে টালবাহানা শুরু করেন। তিন মাস ধরে এ কমিটি ঝুলিয়ে রাখায় নগর বিএনপির সিনিয়র নেতারা গত মাসে দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেখা করে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতে তাঁদের সম্মানজনক স্থান দেওয়ার অনুরোধ জানান। বিশেষ করে কনিষ্ঠ হয়েও আফরোজা খানম নাসরিনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদ দেওয়ায় সিনিয়র নেতাদের স্থান কোথায় হবে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নেতারা।

এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গোটা নগরীতে বিএনপির একটি অংশ দখল-বাণিজ্যে নামে। বিশেষ করে পুকুর, বাসস্ট্যান্ড, মৎস্য মোকাম ও আড়ত দখলের নানা অভিযোগ উঠলে তা দলের হাইকমান্ডের নজরে আসে। বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নগর বিএনপি ৫ আগস্টের পর দলকে নিয়ন্ত্রণে করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার ওপর কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছে। বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান; যে কারণে ৩ দিন ঘুরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন। এমনকি তারেক রহমান মাত্র দুই দিনের মধ্যে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করার নির্দেশ দিয়ে তিনি যে নগর বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ, তা স্পষ্ট করেছেন। এ ছাড়া দখল-বাণিজ্য নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

নগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক হোসেন চৌধুরী বলেন, নতুন-পুরোনো সমন্বয় করে আলোচনার ভিত্তিতে সবাইকে নিয়ে কমিটি করা উচিত। তাতে নেতৃত্ব মজবুত হবে, দলও শক্তিশালী হবে। নগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘যারা বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ, তাদের সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি করলে ভালো হয়। আসলে আমরা যারা মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতারা আছি, তাদের সঙ্গে নগর বিএনপির তিন নেতা যোগযোগ করেন না, কোনো কর্মসূচিতেও ডাকেন না। এই কমিটি করার আগে সবার মতামত নেওয়া দরকার ছিল, কিন্তু আমাদের কোনো মতামত নেয়নি।’

জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়াল সভায় পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি জমা দিতে বলেছেন। আমরা এ সপ্তাহেই ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দেব। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ধরা পড়লে ছাড় দেওয়া হবে না।’ সার্বিক বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন পূজায় যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, সেদিকে জোর দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, আ.লীগ যা করেছে, তা আমরা করলে তাদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কী। এ ছাড়া বরিশাল নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতে বিতর্কিত কেউ যেন সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত