পটুয়াখালী-৩: নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে এককাট্টা আ.লীগের ‘মনোনয়নবঞ্চিতরা’

মীর মহিবুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১: ১৯
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১: ৪৬

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে নৌকার প্রার্থী এস এম শাহজাদা। ১৯৯১ সাল থেকে এ আসনে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার জয় হয়েছে। তবে এবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এককাট্টা হয়ে মনোনয়নবঞ্চিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেনের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন।

এ বিষয়ে গলাচিপা ও দশমিনার ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এস এম শাহজাদা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে পেছনে ফেলে এমপি নির্বাচিত হলেও, তাঁর প্রতিশ্রুতির অনেক কাজ করতে পারেননি। দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নও হয়নি। এ ছাড়া প্রথমবার এমপি হলেও দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি তেমন একটা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচেন এই আসনের প্রার্থীরা হলেন এস এম শাহজাদা (নৌকা), আবুল হোসেন (ঈগল), এনপিপির ছাইফুর রহমান (আম), বিএনএফের এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম (টেলিভিশন), জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম (লাঙ্গল) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. নূরে আলম (একতারা) মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে প্রকাশ্যে মাঠে নামেননি। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়।

প্রচারের প্রথম দিন থেকেই ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেনের নির্বাচনী সভা-সমাবেশে যোগ দিতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এঁদের মধ্যে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সন্তোষ কুমার দে, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গলাচিপা পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক তুহিন, গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়েদুর রহমান এবং দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ লিটন ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন শওকতকে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে গলাচিপা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিন বলেন, ‘বর্তমান এমপি গত পাঁচ বছর দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নিয়ে চলেন নাই, তিনি হাইব্রিড লোকদের নিয়ে দল পরিচালনা করেছে। তাই আমরা মনে করি, তিনি যদি আবারও এমপি হন তাহলে দশমিনা-গলাচিপা আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই আমরা আওয়ামী লীগরা আওয়ামী লীগ পরিবারের হাতে দলকে ফিরিয়ে দিতে সতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেমেছি। তাঁকে বিজয়ী করতে আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখব।’

গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সন্তোষ কুমার দে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চেয়েছেন। তাই আমরা সতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে নেমেছি। এ ছাড়া বর্তমান এমপি পাঁচ বছরে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’

এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বেতাগী-সানকিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘এই আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, এই এলাকার মানুষ নৌকা ছাড়া অন্য কিছুতে বিশ্বাসী নয়। এ ছাড়া বর্তমান এমপি ক্লিন ইমেইজের মানুষ, তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের সাবেক বিজিবি মহাপরিচালক লে. জে. (অব.) আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার দুই উপজেলার মানুষ পরিবর্তন চায়, তাঁরা গত পাঁচ বছর উন্নয়ন বঞ্চিত। আমি দেশের জন্য যেভাবে কাজ করেছি, এখন আমার এলাকার মানুষের জন্যও কাজ করতে মাঠে নেমেছি এবং সবাই আমাকে গ্রহণ করেছে, তাই সবাই ঐক্যবদ্ধ।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, ‘উন্নয়নমূলক কাজ একটি ধারাবাহিক ব্যাপার—এটা ধারাবাহিকভাবেই হবে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যাঁরা নেমেছেন, তাঁরা সবাই মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এবং তাঁরা নৌকার লোক। তাঁরা মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে নেমেছেন। তবে যাঁর পক্ষেই নামুক আমার বিশ্বাস তাঁরা নৌকায় ভোট দেবেন এবং নৌকাই বিজয়ী হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত