ভাঙনের কবলে ভবন, বরিশালে এক ডজন স্কুলে পাঠদান অনিশ্চিত

প্রতিনিধি, হিজলা ও বরিশাল
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭: ৫৬
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮: ০১

সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সাজ সাজ রব। উৎসবের আমেজ বইছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। কিন্তু কিছু এলাকায় অসময়ের বন্যা ও নদীভাঙনের প্রকোপে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। 

নদীবেষ্টিত বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কীর্তনখোলা, মেঘনা, তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে এক ডজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে কয়েকটি এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কোনো ভবনের একাংশ নদীর মধ্যে, আবার কোনোটার প্রাঙ্গণে থৈ থৈ পানি। শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া নতুন চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙনের কবলে পড়ায় ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আগামী রোববার স্কুল খুললে কোথায় পাঠদান হবে সে সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া যায়নি। 

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি কীর্তনখোলার ভাঙনে পড়েছে। করোনাকালে টিনশেড ভবনের একাংশ নদীতে চলে গেছে। অপর ভবনটিও নদী থেকে মাত্র ৩০ ফুট দূরে। গত ২৬ আগস্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা এসে ভবন দুটি দ্রুত ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এ বিদ্যালয়ের জন্য একটি নতুন ভবন বরাদ্দ হলেও সংশ্লিষ্টরা আর এর আশপাশে করতে চাচ্ছেন না। এ অবস্থায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কীভাবে বিদ্যালয়ের ৯৮ শিক্ষার্থীর পাঠদান চলবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ম্যানেজিং কমিটি। 

সদর উপজেলার চরবাড়িয়া নতুন চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন কীর্তনখোলার ভাঙনের কবলে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার বলেন, নতুন চর প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে টেন্ডার আহ্বান করে ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেন। বিদ্যালয়ে পাঠদান কীভাবে চলবে এ প্রসঙ্গে শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা বলেন, এটাই তো চিন্তার বিষয়। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে চরে শেড করে পাঠদান চালাতে। আপাতত সেখানে পাঠদান হচ্ছে না। উপজেলার সায়েস্তাবাদ কামার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আড়িয়াল খা নদীর ভাঙনে পড়েছে বলে জানান শিক্ষা কর্মকর্তা। 

এদিকে মেঘনা, তেঁতুলিয়া ঘেরা মেহেন্দীগঞ্জে হাফ ডজন বিদ্যালয় নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, এখানকার রুকুন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। স্কুলটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত সেখানেই পাঠদান চলবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার দাস বলেন, সদর উপজেলার সাদেকপুর মাদ্রাসা এবং শ্রীপুরের চরবগী মাদ্রাসা ভেঙে ফেলা হয়েছে। শেড করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে আপাতত পাঠদান চলবে। তবে হুমকিতে রয়েছে আমীরগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং চরগোপালপুর লেংগুটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তিনি বলেন, আমীরগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাংশ তেঁতুলিয়া নদীতে চলে গেছে। বাকি অংশে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫০ শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হবে। 

মেহেন্দীগঞ্জের লেংগুটিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নদী ভাঙনের কবলে। সেখানকার আমীরগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের একাংশ নদীতে চলে গেছে। বাকি অংশে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলবে। চরগোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল বারী মনির বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তারা ওই অংশে ক্লাস শুরু করলেও শিক্ষার্থীরা তো নদীর দিকে আতঙ্ক নিয়ে চেয়ে থাকবে। 

হিজলা উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উপজেলার ৪১ নম্বর হিজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৫ নম্বর মধ্য বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার হরিনাথপুরের চর আবুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবন ভাঙনের ঝুঁকিতে। এ দুটি ভবন এরই মধ্যে নিলামের জন্য প্রক্রিয়াধীন। ভবনগুলো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। এই চারটি বিদ্যালয়ে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। 

হিজলায় মেঘনায় বিলীনের পথে প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নিলামে বেচে দেওয়া হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার বলেন, চারটি বিদ্যালয়ের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীকে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর বিদ্যালয়গুলোর ২৫ জন শিক্ষককেও পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়গুলোতে সংযুক্ত করা হবে। 

তিনি আরও জানান, এই চারটি বিদ্যালয় ছাড়াও উপজেলার হরিনাথপুরের বদরটুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশিঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন মেঘনা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শেড করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার। 

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার বলেন, করোনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এরই মধ্যে সদরের নতুন চর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক স্থানে পরিদর্শন করে নদী ভাঙনের কবলে পড়ার প্রমাণ পেয়েছেন। তাঁরা এসব স্কুলের তালিকা লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আপাতত পাঠদানের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করছেন। 

ভাঙন রোধে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত