Ajker Patrika

এমপি শম্ভুর ৫ বছরে সম্পত্তি বেড়েছে চার গুণ 

বরগুনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮: ১১
এমপি শম্ভুর ৫ বছরে সম্পত্তি বেড়েছে চার গুণ 

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নিজের কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নেই। তবে তাঁর স্ত্রী মাধবী দেবনাথের নামে ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ১২৪ টাকার এবং ৫৩ লাখ ২৪ হাজার টাকার দুটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমন তথ্য উল্লেখ করেছেন। 

হলফনামা ঘেঁটে দেখা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এমপি শম্ভু ও স্ত্রীর বার্ষিক আয়সহ মোট স্থাবর-অস্থাবর মোট ৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৮ টাকার সম্পদ রয়েছে। তবে ৫ বছর আগে ২০১৮ সালে শম্ভু ও তাঁর স্ত্রীর বার্ষিক আয়সহ মোট সম্পদ ছিল ২ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ৯৭০ টাকার। অর্থাৎ, গত পাঁচ বছরে শম্ভু ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৬ কোটি ১৬ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৮ টাকার। অর্থাৎ, ৫ বছরে চার গুণেরও বেশি সম্পদ বেড়েছে এমপি শম্ভু ও তাঁর স্ত্রী মাধবী দেবনাথের।

তবে একমাত্র ছেলে সুনাম দেবনাথের কোনো আয় বা সম্পদের তথ্য দুটি নির্বাচনের কোনো হলফনামায়ই উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর আমতলা সড়কে একটি ও বরগুনা সদর রোডে উপজেলা পরিষদসংলগ্ন একটি বাড়ি থাকলেও হলফনামায় এসব বাড়ির কোনো তথ্য দেননি। 

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু দুটি নির্বাচনেই নিজের পেশা দেখিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও বরগুনা জজকোর্টের আইনজীবী ও আইনি পরামর্শক। যদিও ১৯৯১ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পেশায় অনিয়মিত এবং ১৯৯৬ সালের পর থেকে তিনি আইন পেশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন।  

২০১৮ ও ২০২৩ সালের দুটি সংসদ নির্বাচনেই এমপি শম্ভু আয়ের প্রধান উৎস দেখিয়েছেন আইন পেশা। এ ছাড়া ব্যাংকে জমা, সুদের টাকা ও এমপি হিসেবে সম্মানী—এই তিনটি তাঁর আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে হলফনামায় দেখিয়েছেন। 

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এমপি শম্ভু আইন পেশা থেকে ২০ লাখ ৬০ হাজার, ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে সুদ ৯১ হাজার ৮৩৬ টাকা ও এমপি হিসেবে সম্মানী বাবদ ৩৩ লাখ টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছরের ব্যবধানে আইন পেশা থেকে আয় কমে ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা হলেও ব্যাংক সুদ ১ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ১২ লাখ ৬২ হাজার ৬৩১ টাকা হয়েছে। তবে এমপি হিসেবে সম্মানী বাবদ তিনি ৩২ লাখ ৬০ হাজার পেয়েছেন। 

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি শম্ভু হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর হাতে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার, ব্যাংকে জমা ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৩ টাকা এবং এফডিআর জমা ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর কাছে নগদ ২ লাখ ১৩ হাজার ৬৮ টাকা এবং সঞ্চয় ১২ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়া ৩০ হাজার টাকা দামের ২০ তোলা স্বর্ণালংকার, ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক (টিভি, ফ্রিজ ওভেন) ও ২ লাখ টাকার আসবাব  (চেয়ার, টেবিল ও সোফা) রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। 

এ ছাড়া স্ত্রীর ২০ তোলা স্বর্ণ যার দাম ৬ হাজার, ১২ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকস ও আসবাব থাকার কথা উল্লেখ ছিল। ওই বছর এমপি শম্ভুর কাছে ৬৪ হাজার টাকার পিস্তল ও শটগান রয়েছে বলে উল্লেখ  করেছিলেন। 

কিন্তু ২০২৩ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে বেড়ে ২ লাখ, ব্যাংক জমা ২০ লাখ থেকে বেড়ে ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ৩৯২ টাকা, এফডিআর ও সঞ্চয় ৬০ হাজার থেকে ৪৫ লাখ এবং ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৭ টাকা হয়েছে। 

এ ছাড় স্ত্রীর কাছে গতবার নগদ আড়াই লাখ থাকলেও এবার তা কমে নগদ ২৫ হাজার, স্ত্রীর ব্যাংকে জমা ১২ থেকে বেড়ে ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৪ টাকা, এফডিআর জমা আছে ৩১ লাখ ২৪ হাজার ৫১৪ টাকা হয়েছে। তবে স্বর্ণালংকার ১৬ তোলা থেকে বাড়েনি দুজনার কারোরই। 

এ ছাড়া নিজের ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও আসবাব ২০ হাজার টাকা থেকে বড়ে ৪০ হাজার, ১২ হাজার টাকার থেকে বেড়ে মোট ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক ও আসবাব রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। 

২০১৮ সালে এমপি শম্ভুর কাছে ৬৪ হাজার টাকার পিস্তল ও শটগান থাকলেও এবার তাঁর কাছে ২২ বোরের একটি রাইফেল, একটি পিস্তল রয়েছে। যার দাম ২ লাখ টাকা।

২০১৮ সালের হলফনামায় তাঁর নামে ৬৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৭ টাকা মূল্যের একটি ল্যান্ড ক্রুইজার, ১৫ লাখ ৬০ হাজার ৬০০ টাকা মূলের একটি টয়োটা গাড়ি এবং তাঁর স্ত্রী মাধবী দেবনাথের একটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যেও মাইক্রোবাস থাকার কথা উল্লেখ্য করলেও ২০২৩ সালের হলফনামায় ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৩৮৬ টাকার একটিসহ ২৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ির থাকার উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর নামে ৪৫ লাখ টাকা একটি গাড়ি রয়েছে। তবে গাড়ির ব্র্যান্ড ও মডেল উল্লেখ করেননি।

২০১৮ সালে শম্ভুর স্থাবর সম্পদের ছিল তিন একর কৃষিজমির কথা উল্লেখ থাকলেও জমির দামের কোনো তথ্য দেননি। আবার এবার তিনি ৮৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকার কৃষিজমি থাকার উল্লেখ করলেও জমির পরিমাণ উল্লেখ করেননি। 

২০১৮ সালে তাঁর ৩ একর ৪০ শতাংশ অকৃষিজমি, যার আনুমানিক মূল্য ২ লাখ টাকা দেখিয়েছিলেন। তবে ২০২৩ সালে জমির পরিমাণ উল্লেখ না করলেও এবার তাঁর ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা অকৃষিজমি ও জমি বাবদ আরও অগ্রিম ৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে। 

স্ত্রী মাধবী দেবনাথের নামে কৃষি বা অকৃষি কোনো জমিই নেই। তবে মাধবী দেবনাথের ২০১৮ সালে ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ১২৪ টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থাকলেও এবার ৫৩ লাখ ২৪ হাজার টাকার আরও একটি অ্যাপার্টমেন্ট যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, মাধবী দেবনাথের ৮২ লাখ ৬৯ হাজার ১২৪ টাকা মূল্যের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। 

হলফনামায় উল্লিখিত তথ্যের বিষয়ে জানতে বরগুনা-১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ ছাড়া তাঁর ব্যবহৃত নম্বরের ওয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিলেও সাড়া মেলেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে দুই যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ: পর্যটক সেজে লামায় লুকিয়ে ছিলেন ৫ আসামি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরে স্থানীয় দুই যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরজিরি এলাকায় মাতামুহুরী রিভার ভিউ রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমি উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান বাবু (২৬), ইমরান উদ্দিন খোকা ওরফে আরিয়ান খোকা (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (৩৩), মো. সাকিব (২০) এবং আরেকজন ১৭ বছর বয়সী কিশোর। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

ওসি ছমি উদ্দিন বলেন, ৯ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কে বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফারুক নামের দুই যুবদল কর্মী। এই ঘটনার পর থেকে পাঁচ আসামি পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানের লামায় আত্মগোপনে ছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে লামায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বাইপাস সড়কের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন দুই যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম (৩৫) ও মোহাম্মদ ফারুক (৩৪)। তাঁরা শহরের বাইপাস সড়কের চারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় মৎস্যজীবী লীগের নেতা আটক

ভোলা প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ মৎস্যজীবী লীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ভোলার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সদর উপজেলার ব্যাংকের হাট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন।

আটক ব্যক্তির নাম মো. মোশারফ হোসেন (৬০)। তিনি মৎস্যজীবী লীগের টাস্কফোর্স প্রতিনিধি বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় ভোলার কোস্ট গার্ড বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করে।

কোস্ট গার্ড ভোলা দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সূর্যের দেখা নেই, কনকনে ঠান্ডায় কাবু জনজীবন

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকাশে সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় মোড়া ঠাকুরগাঁও শহর। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্ত লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো আবহাওয়া অফিস নেই, তবে জেলার ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট তখন বন্ধ। পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম। জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলেও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে রাত ও সকাল পার করছে তারা।

সকালে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক হাসান রাব্বির সঙ্গে। সড়কের পাশে কাগজ ও পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে তিনি বলেন, ‘আগে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন ঠান্ডা এত বেড়েছে যে আজ ১০টার আগে বের হতে পারিনি। কুয়াশা একটু কমার অপেক্ষা করছি।’ শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান শহরের কালীবাড়ি এলাকার কলা বিক্রেতা ভূষণ রায়। তিনি বলেন, ‘সোয়েটার, টুপি, মাফলার পরেও শরীর বাঁচে না। শীত কিছুতেই মানছে না।’

এদিকে শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকায় ৮ হাজার ৫০০ কম্বল কেনা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, এ বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কম্বল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৭ হাজার কম্বল এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দেড় হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাকসু, শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রশক্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ‘আগামীকালকে (শুক্রবার) বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকালকে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ বাংলাদেশের দামাল ছেলেদেরকে হত্যা করেও ওর রক্ত পিপাসা মেটেনি। বিদেশে বসে এখনো বিপ্লবীদের হত্যা করার ছক করছে। আমরা আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যে সমস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে বৈধভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ওসমান হাদির খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর আজ শুক্রবার দুপুরেও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একই ধরনের বক্তব্য লিখে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল, সেই লড়াই জারি রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করে দিতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।’

অন্য আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্যের কিছু শব্দ নিয়ে এই স্পষ্টীকরণ প্রদান করছি। বক্তব্যে ব্যবহৃত “তছনছ” শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুরকে বোঝানো হয়নি। বরং এর অর্থ ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে তুলে, সর্বদা সচেতন থেকে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে মোকাবিলা করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ প্রসঙ্গে আরও যুক্ত করা প্রয়োজন যে, উদীচীসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তবে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত