পিরোজপুরের মিহির কান্তি বরগুনায় নৌকার মনোনয়ন চেয়ে আলোচনায়

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ২১: ২৯
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০১: ০৯

সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার বরগুনা-১ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। পিরোজপুরের বাসিন্দা মিহির কান্তি বরগুনা-১ আসন থেকে মনোনয়ন চাওয়ায় বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তাঁকে ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনার শুরু হয়েছে এলাকায়। স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যেও এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের একটি সূত্রের তথ্যমতে, বরগুনা-১ আসন থেকে এবার মোট ২২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এঁদের মধ্যে চারজন জনপ্রতিনিধি, তিনজন নারী, সাবেক এনজিও কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন সাবেক আমলা ও বাকি সবাই সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা। শুধু মিহির কান্তি মজুমদার ছাড়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী সবাই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। প্রথমবারের মতো অন্য জেলার বাসিন্দা ও সাবেক আমলা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় বিষয়টি স্থানীয়দের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড. মিহির কান্তি মজুমদার বর্তমানে ‘উদ্দীপন’ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। মিহির কান্তি মজুমদারের ছোট ভাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। যিনি এসপি বাবুল আখতারের স্ত্রী হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আলোচিত। 

পিরোজপুর জেলার সদর উপজেলার জুজখোলা গ্রামের শ্রীকান্ত মজুমদারের ছেলে মিহির কান্তি মজুমদার। তিনি ১৯৮১ সালে বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান। ১৯৮৬ সালের নভেম্বর মাসে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে ৩ নভেম্বর তিনি বদলিজনিত কারণে আমতলী ত্যাগ করেন। এরপর তিনি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

২০০৯ সাল তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ২০১০-১১ পর্যন্ত বন ও পরিবেশ এবং সর্বশেষ ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর মিহির কান্তি মজুমদারকে একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক) প্রকল্পে তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষে তিনি ‘উদ্দীপন: ইউনাইটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভস ফর প্রোগ্রামড অ্যাকশনস’ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন এবং ২০২০ সালের আগস্ট মাসে তিন বছরের জন্য তিনি সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে মিহির কান্তি উদ্দীপনের কার্যনির্বাহী পর্ষদেরও সদস্য। 

স্থানীয় সূত্রের তথ্যমতে, মিহির কান্তি মজুমদার কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়ার ইউনিয়নে বিয়ে করেছেন। তিনি বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় আশির দশকে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের সময় তৎকালীন পশ্চাৎপদ জনপদ তালতলীর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। ২০১৫ সালে তালতলীর কবিরাজপাড়া গ্রামে ড. এম কে মজুমদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ট্যাংরাগিরি ইকোপার্কের কাছে একটি স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। কমডেকার আয়োজনে তালতলী স্কাউট সমাবেশও হয়েছিল মিহির কান্তি মজুমদারের উদ্যোগে। ওই সমাবেশ করার জন্য তিনি ১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করেছিলেন।

মহির কান্তি মজুমদারের মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, ‘স্থানীয় খেলোয়াড়েরা যদি ভালো না খেলে, তখনই বাইরে থেকে ভালো খেলোয়াড় আনতে হয়। আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় দুর্নীতিবাজ এমপিরা বাদ পড়বেন। সেখানে নেত্রী যদি মনে করেন সাবেক আমলারা যোগ্য বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য, তাঁকে মনোনয়ন দিতেই পারেন। আমলা বলতে আমরা যা বুঝি, মিহির কান্তি মজুমদার তেমন না। তিনি মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এটা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে আমি মনে করি।’ 

যোগাযোগ করা হলে বরগুনা-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মিহির কান্তি মজুমদার জানান, আমতলী-তালতলীর গণমানুষের ভালোবাসার টানেই তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। 

মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, ‘আমতলী-তালতলী-বরগুনার গণমানুষের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ওই সম্পর্কের টানেই তাঁরা আমার জন্য আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই সিদ্ধান্ত মেনেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত