আগৈলঝাড়ায় কচুরিপানার কাগজে তৈরি হচ্ছে বড়দিনের উপহার 

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৪৩
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০৫

আর মাত্র চার দিন পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পালিত হবে ক্রিসমাস বা বড়দিন। বড়দিনের আনন্দে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ দিনটিতে মেতে উঠবে। বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হবে যিশুর ঘর। বারান্দায় ঝুলতে থাকবে কাগজের তারা। এর মাঝে জ্বলতে থাকবে রঙিন আলো। ঘরে ঘরে তৈরি হবে কেক। উপহার হিসেবে আদান-প্রদান করা হবে কেক, চকলেট, কার্ড আর হাতে তৈরি হরেক রকমের জিনিসপত্র।

জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় কচুরিপানা দিয়ে বড়দিনের সান্তা ক্লজ, ট্রি সাজানোর সামগ্রী, বাহারী উপহারসহ খেলনাসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রায় দুই হাজার দুস্থ ও বিধবা নারী। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) ও প্রকৃতির উদ্যোগে আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি কেন্দ্রে নারীরা পরিত্যক্ত ডোবা কিংবা পুকুরের কচুরিপানার কাগজ দিয়ে তৈরি করছেন বড়দিনের সান্তা ক্লজ, ট্রি সাজানোর পণ্যসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। এ সংস্থার মাধ্যমে এসব শৌখিন খেলনা ও উপহারসামগ্রী ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এখানকার কচুরিপানা দিয়ে তৈরি শৌখিন উপহারসামগ্রী দেশের সর্বত্র ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ফলে বিধবা ও দুস্থ নারীরা খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার অবলম্বন।

উপজেলার জোবারপার এন্টারপ্রাইজের মণি বালার (৪৮) সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কচুরিপানা আর বড়দিন এবার আমার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কচুরিপানা দিয়ে সান্তা ক্লজসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। আমার মতো এ এলাকার দুই হাজার অসহায় ও দুস্থ নারী এমসিসির আগৈলঝাড়ার পাঁচটি কেন্দ্রে কাজ করে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। 

মণি বালা আরও বলেন, ‘অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোনো মতে খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে ছিলাম। গত দুই বছর ধরে এমসিসির তত্ত্বাবধানে আমি কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাহারী উপহার ও খেলনাসামগ্রী তৈরি করে তিনবেলা ভাত খেতে পারছি।’ 

পাপড়ি মণ্ডল নামে একজন ছোট্ট একটি পুতুল হাতে নিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে সান্তা আছে। এ বছর এখানকার কচুরিপানার কাগজের তৈরি সান্তা ক্লজসহ বড়দিনের অন্যান্য শৌখিন পণ্যসামগ্রী দেশব্যাপী বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। 

এ বিষয়ে বিধবা বিনা হালদার (৫০) ও বিধবা শিউলি বেগম (৪৭) বলেন, ‘আমরা যেসব জিনিস তৈরি করছি, সেগুলো দিয়ে দেশ-বিদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বড়দিন পালন করে আসছে। এখান থেকে নারী শ্রমিকেরা প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় করছেন।

এমসিসির জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার পাপড়ি মণ্ডল বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের পাঁচটি কেন্দ্রে প্রায় দুই হাজার নারী শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছেন স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা কিংবা অসহায় ও দুস্থ। উপজেলার জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ, কালুরপাড়ের বিবর্তন, বড়মগড়ার কেয়াপাম, নগরবাড়ীর চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ও বাগধা এন্টারপ্রাইজে প্রতিবছর এ ধরনের জিনিস তৈরি করে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত