গৌরনদীতে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪, ২৩: ৫০

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার আহত উপজেলা যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ও আহত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহর মা বাদী হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। 

এদিকে আহত সৈকত গুহ ও তাঁর সহযোগী পলাশ হাওলাদারের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পাঠানো হয়েছে। এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। 

হারিছুর রহমানের সমর্থক আহত যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দিলুর স্ত্রী আফরোজ আক্তার ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ, তাঁর ছোট ভাই কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক পিন্টু গুহ, গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খোকন মল্লিক, আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন হাওলাদার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সহসভাপতি মো. ইখতিয়ার হোসেন। 

অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহর মা তাপসি রানি গুহ ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন—উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নেতা দেলোয়ার হোসেন, তাঁর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ মাহমুদ ও বাটাজোর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কালু তালুকদার। 

সৈকত গুহের সমর্থক মো. মণির মিয়া বলেন, ‘আমরা রাত সাড়ে ৮টার দিকে আওয়ামী লীগের কর্মী আলতাফ হোসেনের জানাজায় যাচ্ছিলাম। এ সময় মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলুসহ তার ১৪-১৫ জন সমর্থক বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে কিছু সমর্থকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন হারিছুর রহমানের সমর্থক যুবলীগ নেতা দেলোয়ারের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী ইমতিয়াজ মাহমুদ একজনকে থাপ্পড় মারে। এ নিয়ে প্রথমে দুই পক্ষে হাতাহাতি, পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের হারিছুর রহমানের সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে সৈকত গুহ, সমর্থক পলাশ হাওলাদার (২৭) ও মামুন খানকে (২৫) কুপিয়ে জখম করে।’ 

আহত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ বলেন, ‘হারিছুর রহমানের সন্ত্রাসী বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেয়। আমি বিষয়টি টের পেয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসিকে ফোনে অবহিত করি। তাঁর সাহায্য চাই। কিন্তু পুলিশ পাঠাতে বিলম্ব করায় হারিছুরের ক্যাডার দেলোয়ার হোসেনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে। এ সময় আমার সহযোগী পলাশ হাওলাদার ও মামুন খানকে কুপিয়ে জখম করে একটি ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে।’ 

সৈকত গুহ আরও বলেন, ‘গৌরনদী থানার উপপরিদর্শক মো. সহিদুল ইসলাম পুলিশ নিয়ে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। আমার ওপর হামলার খবর পেয়ে আমার মা তাপসি রানি গুহ স্ত্রী বিপাশা গুহ ও ছোট ভাই পিন্টু গুহ গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছালে তাঁদের মারধর করা হয়।’ 

এ অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক ও বাটাজোর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কালু তালুকদার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ দেলোয়ার হোসেনকে লক্ষ করে পিস্তল দিয়ে গুলি করেছে।’ 

গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. মাজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মণির হোসেন মিয়া ও মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু সমর্থকদের নিয়ে একটি জানাজায় যাওয়ার পথে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত উপজেলা যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ও আহত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহর মা বাদী হয়ে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত