১৪ বছরে একজন রোগীও চড়েননি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সে, গচ্চা ২২ লাখ টাকা

রুদ্র রুহান, বরগুনা
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৫২

সিডর পরবর্তী সময়ে নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত বরগুনায় নৌ-পথে রোগী বহনের জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এক যুগের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করেনি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। আর অযত্ন আর অবহেলায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি এখন নিঃশেষের পথে। ফলে পানিতে ভেসেই গচ্চা গেছে সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা। 

সিভিল সার্জন কার্যালয় বরগুনা সূত্রের তথ্যমতে, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ২০০৮ সালে নৌপথে রোগী পরিবহনের জন্য বরগুনায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কিনে দেয়। এতে ব্যয় ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করেনি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। দীর্ঘদিন এটির খাকদোন নদীর চরে ফেলে রাখার পর এই চরে থেকে দিনে দিনে অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে গিয়েছে।

পরিত্যক্তভাবে পড়ে আছে ২২ লাখ টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সবর্তমানে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ঠিকানা হয়েছে জেনারেল হাসপাতালের পুরোনো ভবনের পূর্বপাশে পরিত্যক্ত স্থানে। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জেনারেল হাসপাতালের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। শুধুমাত্র অবকাঠামো টিকে আছে। ভেতরের যন্ত্রপাতি কিছু নেই। শূন্য লতা আর আগাছায় ছেয়ে আছে ২২ লাখ টাকার সেই অ্যাম্বুলেন্সটি।

নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির চালক আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি এখনো পর্যন্ত এটিতে কোনো রোগী পরিবহন করিনি। বরগুনা থেকে বরিশাল যাওয়া আসায় জ্বালানিসহ ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কারণ রোগীদের কেউ এর খরচা বহন করে আসতে চায় না। জ্বালানি খরচ অনেক। এর অর্ধেকেরও কম খরচে সড়কপথে রোগী আনা নেওয়া করা যায়। সে কারণে এটি অচল হয়ে পড়ে আছে।’ 

হাসপাতালের ভান্ডার সংরক্ষক জসীম উদ্দীন বলেন, ‘নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের দুটো ইঞ্জিন ভালো অবস্থায়ই ভান্ডারে সংরক্ষিত আছে। এটির অবকাঠামো নষ্ট হয়ে আছে। আমি ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে এটি গ্রহণ করার পর থেকে একটিও ট্রিপ দেওয়া হয়নি।’ 

নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে নেই কোনো যন্ত্রপাতিতবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করেই একপ্রকার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘উপকূলীয় জেলা বিবেচনায় নৌপথে রোগীদের সেবার জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খরচার কারণে রোগীরা নৌ-অ্যাম্বুলেন্সে যাতায়াত না করায় অচল হয়ে পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে।’ 

অপরিকল্পিতভাবে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করায় রাষ্ট্রের টাকা অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আলহাজ্ব মো. আব্দুল রব ফকির বলেন, অপরিকল্পিত ও অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট হয়ে যাওয়া দুঃখজনক। এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার আগে খরচের বিবেচনা করা উচিত ছিল। সেটি করা হয়নি, যার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল এটি ব্যবহারে ব্যাপক প্রচারণা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। কিন্তু সেখানেও উদাসীনতা ছিল। 

বরগুনার সিভিল সার্জন মো. ফজলুল হক বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি নদী থেকে তুলে এনে রাখা হয়েছে বরগুনা সদর হাসপাতালের মধ্যে। যা এখন আর মেরামতের উপযোগীও নেই। এটি কি করা যায় আমরা বসে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত