আব্দুর রাজ্জাক
অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই লেখাটা লিখছি। রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে অন্য একটি প্রবন্ধ লিখব বলে ভেবেছিলাম। গত রোববার থেকেই বুকের মধ্যে কেমন যেন পাথরচাপা একটা কষ্ট অনুভব করছি। প্রথমে টেলিভিশনে খবরে দেখলাম, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তিন ছাত্র মারা গেছেন। যে তিন ছাত্র মারা গেছেন, তাঁদের সমবয়সী হবে আমার মেয়েটি। ২০২০ সালে তাঁদের সঙ্গেই ওই ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিল সে। পরবর্তী সময়ে সে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। যখন তিনটি ছেলের নাম আমি দেখলাম—জোবায়ের আলম সাকিব, মীর মোজাম্মেল হোসেন নাঈম ও মুবতাসিম রহমান মাহিন—সঙ্গে সঙ্গে আমার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল! আমার মেয়েটি যদি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যেত, হয়তো সে ওই বাসেই পিকনিকে যেত। যে তিনটি ছেলের নাম উল্লেখ করলাম, সেই তিনটি ছেলেও আমাদেরই মতো, আমাদের এই সমাজের কোনো হতভাগা মা-বাবার সন্তান। তাঁদের পরিবারে আজ কী মাতম চলছে, কী আহাজারি চলছে, সে কথা হয়তো সবাই অনুভব করতে পারছেন। আমার মেয়েটি যখন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পায় এবং একপর্যায়ে ভর্তি হতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল, আমিও সঙ্গে গিয়েছিলাম। তখন ওই তিনটি ছেলের মতোই অনেক ছেলেকে দেখেছি। এখন মনে মনে ভাবছি, হয়তো এই তিনটি ছেলেকেও আমি দেখেছিলাম।
যাঁদের মৃত্যুর খবর শুনেছি, তাঁরা যে অদম্য মেধাবী, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ওই বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট ও অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন, তাঁদের মেধা সম্পর্কে কারও কোনো সন্দেহ থাকার কথা না। অবশ্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাই মেধাবী। এই তিন ছাত্রের বয়স দেখলে বোঝা যায় তাঁরা শেষ বর্ষের অথবা তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁরা হতে পারতেন এই সমাজের সবচেয়ে বিজ্ঞ প্রকৌশলী, কত রকম স্পেশালিস্ট হতে পারতেন—সে কথা ভাবলেই মনটা ব্যথাতুর হয়ে যায়। যাহোক, এই তিনটি ছেলে আজ শুধুই স্মৃতি, অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, তাঁদের পরিবারের প্রতি থাকল সহানুভূতি ও সমবেদনা।
আজকের লেখার বিষয়বস্তুর ভূমিকাটা একটু বড় হয়ে গেল নিজের অজান্তেই। আমাদের দেশে এই সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাপারটা সব সময় আমরা তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকি। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এই রকম পাবেন না যে ২২০ ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন ছোটখাটো রাস্তার পাশ দিয়ে খুঁটির ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। মাইলের পর মাইল এ রকম অরক্ষিতভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দেওয়া হয়। শনিবার যে ঘটনাটা ঘটল, এটা একেবারেই নিরাপত্তার অবহেলা বলতে পারেন, বলতে পারেন ইচ্ছাকৃত অবহেলা। আমরা এইসব ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দিই না। এই লাইনগুলো যদি মাটির নিচ থেকে যেত অথবা যদি প্লাস্টিকের আবরণে ঢাকা থাকত, তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। আমি আমাদের অঞ্চলে এই রকম বিদ্যুতায়িত হয়ে অনেক মৃত্যু দেখেছি। মাজেদ নামে একটি ছেলে, যে ছিল বৃদ্ধ বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন, সে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গিয়েছিল ১৯৮২ সালে। আমি মাজেদের বৃদ্ধ বাবাকে ভিক্ষা করতে দেখেছি। এই মৃত্যুগুলো ঘটে সচেতনতার অভাবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয় না। যথাযথ কর্তৃপক্ষ একটু দায়িত্ববান হলে এ দুর্ঘটনা এড়াতে পারে।
শুধু বিদ্যুতায়িত ব্যাপার ছাড়াও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আপনারা প্রায়ই শুনবেন, পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে, সমুদ্রসৈকতে সাঁতার কাটতে গিয়ে, নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেক তরুণ-কিশোর ভেসে যায় বা মৃত্যুবরণ করে। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গাতেই তরুণ-যুবকদের সচেতন করতে পারে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা—সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার ওপরে প্রবন্ধসহ বিভিন্ন লেখা লিখে।
আমাদের ঢাকা শহরেরই অনেক জায়গায় রাস্তার ম্যানহোল খোলা থাকে, যেকোনো সময় যেকোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং ঘটছেও। এদিকে তেমন কোনো খেয়াল নেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের। রাস্তা পারাপারের সময় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, অনেক লোক মারা যায় প্রতিদিন। এসব ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা একেবারে শূন্যের কোঠায়। যেকোনো সময় ঢাকা শহরে আপনি রাস্তায় বেরোলেই দেখবেন যেসব জায়গায় ওভার ব্রিজ আছে, সেখানে মানুষ ওভার ব্রিজে না উঠে রাস্তা পার হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের জনগণ জানেই না জেব্রা ক্রসিং কেন দেওয়া হয়। চালকেরা জানেন না যে জেব্রা ক্রসিংয়ের কাছাকাছি গেলে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হয়। দুর্ঘটনা ঘটার পরে হয়তো এক দিন খবর হয়, রাস্তা ব্লক হয়, কিছু গাড়িঘোড়া ভাঙচুর হয়। তারপর আবার সব স্বাভাবিক।
প্রতিটি স্কুল-কলেজে যদি ছাত্রছাত্রীদের রাস্তা পারাপারের ট্রাফিকব্যবস্থা সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া হয় বা সচেতন করা হয়, তাহলে কিন্তু এই দুর্ঘটনা রোধ করা যায়। কিন্তু কেউ উদ্যোগ নেয় না। বছরে এক দিন, অন্তত যেদিন ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, সেই দিন যদি আধা ঘণ্টার একটি সচেতনতামূলক ক্লাস নেওয়া হয় রাস্তা পারাপার ও বিভিন্ন নিরাপত্তার ব্যাপারে, তাহলে বোধ হয় এইসব দুর্ঘটনা কমে আসত। এ রকম সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কোনো টাকাপয়সা লাগে না, দরকার শুধু একটু উদ্যোগ। সে উদ্যোগ হতে পারে সরকারিভাবে, আধা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মাধ্যমে, হতে পারে কোনো এনজিও বা সচেতন কোনো ব্যক্তি উদ্যোগের মাধ্যমে। ইউরোপের বহু দেশে এই ধরনের সচেতনতামূলক শিক্ষা দেওয়া হয়, বিশেষ করে স্কুলপর্যায়ে।
যেসব দুর্ঘটনার কথা বললাম এগুলো ইচ্ছা করে কেউ ঘটায় না। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় বা বিচারব্যবস্থায় এই ধরনের কাজের জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা বলতে গেলে নেই। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে একটি এফআইআর হবে, হয়তো একটি মামলাও হতে পারে, এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়েছে বা শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে, এমন কোনো নজির কেউ দেখাতে পারবেন না।
এসব দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে আমরা যাকে দোষ দিই সেটা হলো আমাদের অদৃষ্ট। বলতে গেলে প্রায় শতভাগ মানুষই আমরা এইসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে বা বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এটাকে নিয়তির পরিহাস মনে করি! সমাজের ভুল, আমাদের সবার ভুলকে আমরা নিয়তির ওপর ছেড়ে দিই। সে জন্যই আমাদের সমাজে এই ধরনের দুর্ঘটনা বেশি বেশি ঘটে। যত দিন পর্যন্ত আমরা এই সামাজিক দুর্ঘটনার জন্য উপরওয়ালাকে দায়ী করব, নিয়তিকে দায়ী করব, তত দিন এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমরা মুক্তি পাব না।
বিদ্যুৎজনিত দুর্ঘটনা, রাস্তা পারাপারের জন্য দুর্ঘটনা, পুকুর-নদী-সমুদ্রে সাঁতার কাটাসহ এই ধরনের সামাজিক দুর্ঘটনার জন্য আমরা আর অদৃষ্টের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের সচেতন করে তুলি। প্রয়োজন হলে প্রতিবছর স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরের শুরুর প্রথম ক্লাসের দিনে এই সম্পর্কে এক ঘণ্টা সবাইকে সচেতন করে তুলি। যেসব দুর্ঘটনা আমরা একেবারেই এড়াতে পারি না, সেগুলো হলো বজ্রপাত ও ভূমিকম্প। এই দুটি দুর্ঘটনার ব্যাপারে আমরা কোনো প্রতিরোধ করতে পারি না বা এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্য সব দুর্ঘটনার ব্যাপারে আমরা যদি সচেতন হই, নিজেদের জীবনকে ভালোবাসি; আমরা যদি মনে করি এই জীবন শুধু নিজেদের জন্য না, আমাদের পরিবারের জন্য, পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য, এই সমাজের জন্য, এই রাষ্ট্রের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ—সেই কথা ভেবে এইসব দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখি ও সমাজকে মুক্ত করি। এটাই হোক সামাজিক ও অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা রোধের মোটামুটি স্থায়ী ব্যবস্থা।
লেখক: আব্দুর রাজ্জাক
প্রকৌশলী
অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই লেখাটা লিখছি। রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে অন্য একটি প্রবন্ধ লিখব বলে ভেবেছিলাম। গত রোববার থেকেই বুকের মধ্যে কেমন যেন পাথরচাপা একটা কষ্ট অনুভব করছি। প্রথমে টেলিভিশনে খবরে দেখলাম, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তিন ছাত্র মারা গেছেন। যে তিন ছাত্র মারা গেছেন, তাঁদের সমবয়সী হবে আমার মেয়েটি। ২০২০ সালে তাঁদের সঙ্গেই ওই ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিল সে। পরবর্তী সময়ে সে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। যখন তিনটি ছেলের নাম আমি দেখলাম—জোবায়ের আলম সাকিব, মীর মোজাম্মেল হোসেন নাঈম ও মুবতাসিম রহমান মাহিন—সঙ্গে সঙ্গে আমার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল! আমার মেয়েটি যদি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যেত, হয়তো সে ওই বাসেই পিকনিকে যেত। যে তিনটি ছেলের নাম উল্লেখ করলাম, সেই তিনটি ছেলেও আমাদেরই মতো, আমাদের এই সমাজের কোনো হতভাগা মা-বাবার সন্তান। তাঁদের পরিবারে আজ কী মাতম চলছে, কী আহাজারি চলছে, সে কথা হয়তো সবাই অনুভব করতে পারছেন। আমার মেয়েটি যখন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পায় এবং একপর্যায়ে ভর্তি হতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল, আমিও সঙ্গে গিয়েছিলাম। তখন ওই তিনটি ছেলের মতোই অনেক ছেলেকে দেখেছি। এখন মনে মনে ভাবছি, হয়তো এই তিনটি ছেলেকেও আমি দেখেছিলাম।
যাঁদের মৃত্যুর খবর শুনেছি, তাঁরা যে অদম্য মেধাবী, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ওই বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট ও অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন, তাঁদের মেধা সম্পর্কে কারও কোনো সন্দেহ থাকার কথা না। অবশ্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাই মেধাবী। এই তিন ছাত্রের বয়স দেখলে বোঝা যায় তাঁরা শেষ বর্ষের অথবা তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁরা হতে পারতেন এই সমাজের সবচেয়ে বিজ্ঞ প্রকৌশলী, কত রকম স্পেশালিস্ট হতে পারতেন—সে কথা ভাবলেই মনটা ব্যথাতুর হয়ে যায়। যাহোক, এই তিনটি ছেলে আজ শুধুই স্মৃতি, অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, তাঁদের পরিবারের প্রতি থাকল সহানুভূতি ও সমবেদনা।
আজকের লেখার বিষয়বস্তুর ভূমিকাটা একটু বড় হয়ে গেল নিজের অজান্তেই। আমাদের দেশে এই সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাপারটা সব সময় আমরা তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকি। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এই রকম পাবেন না যে ২২০ ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন ছোটখাটো রাস্তার পাশ দিয়ে খুঁটির ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। মাইলের পর মাইল এ রকম অরক্ষিতভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দেওয়া হয়। শনিবার যে ঘটনাটা ঘটল, এটা একেবারেই নিরাপত্তার অবহেলা বলতে পারেন, বলতে পারেন ইচ্ছাকৃত অবহেলা। আমরা এইসব ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দিই না। এই লাইনগুলো যদি মাটির নিচ থেকে যেত অথবা যদি প্লাস্টিকের আবরণে ঢাকা থাকত, তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। আমি আমাদের অঞ্চলে এই রকম বিদ্যুতায়িত হয়ে অনেক মৃত্যু দেখেছি। মাজেদ নামে একটি ছেলে, যে ছিল বৃদ্ধ বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন, সে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গিয়েছিল ১৯৮২ সালে। আমি মাজেদের বৃদ্ধ বাবাকে ভিক্ষা করতে দেখেছি। এই মৃত্যুগুলো ঘটে সচেতনতার অভাবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয় না। যথাযথ কর্তৃপক্ষ একটু দায়িত্ববান হলে এ দুর্ঘটনা এড়াতে পারে।
শুধু বিদ্যুতায়িত ব্যাপার ছাড়াও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আপনারা প্রায়ই শুনবেন, পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে, সমুদ্রসৈকতে সাঁতার কাটতে গিয়ে, নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেক তরুণ-কিশোর ভেসে যায় বা মৃত্যুবরণ করে। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গাতেই তরুণ-যুবকদের সচেতন করতে পারে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা—সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার ওপরে প্রবন্ধসহ বিভিন্ন লেখা লিখে।
আমাদের ঢাকা শহরেরই অনেক জায়গায় রাস্তার ম্যানহোল খোলা থাকে, যেকোনো সময় যেকোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং ঘটছেও। এদিকে তেমন কোনো খেয়াল নেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের। রাস্তা পারাপারের সময় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, অনেক লোক মারা যায় প্রতিদিন। এসব ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা একেবারে শূন্যের কোঠায়। যেকোনো সময় ঢাকা শহরে আপনি রাস্তায় বেরোলেই দেখবেন যেসব জায়গায় ওভার ব্রিজ আছে, সেখানে মানুষ ওভার ব্রিজে না উঠে রাস্তা পার হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের জনগণ জানেই না জেব্রা ক্রসিং কেন দেওয়া হয়। চালকেরা জানেন না যে জেব্রা ক্রসিংয়ের কাছাকাছি গেলে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হয়। দুর্ঘটনা ঘটার পরে হয়তো এক দিন খবর হয়, রাস্তা ব্লক হয়, কিছু গাড়িঘোড়া ভাঙচুর হয়। তারপর আবার সব স্বাভাবিক।
প্রতিটি স্কুল-কলেজে যদি ছাত্রছাত্রীদের রাস্তা পারাপারের ট্রাফিকব্যবস্থা সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া হয় বা সচেতন করা হয়, তাহলে কিন্তু এই দুর্ঘটনা রোধ করা যায়। কিন্তু কেউ উদ্যোগ নেয় না। বছরে এক দিন, অন্তত যেদিন ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, সেই দিন যদি আধা ঘণ্টার একটি সচেতনতামূলক ক্লাস নেওয়া হয় রাস্তা পারাপার ও বিভিন্ন নিরাপত্তার ব্যাপারে, তাহলে বোধ হয় এইসব দুর্ঘটনা কমে আসত। এ রকম সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কোনো টাকাপয়সা লাগে না, দরকার শুধু একটু উদ্যোগ। সে উদ্যোগ হতে পারে সরকারিভাবে, আধা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মাধ্যমে, হতে পারে কোনো এনজিও বা সচেতন কোনো ব্যক্তি উদ্যোগের মাধ্যমে। ইউরোপের বহু দেশে এই ধরনের সচেতনতামূলক শিক্ষা দেওয়া হয়, বিশেষ করে স্কুলপর্যায়ে।
যেসব দুর্ঘটনার কথা বললাম এগুলো ইচ্ছা করে কেউ ঘটায় না। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় বা বিচারব্যবস্থায় এই ধরনের কাজের জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা বলতে গেলে নেই। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে একটি এফআইআর হবে, হয়তো একটি মামলাও হতে পারে, এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়েছে বা শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে, এমন কোনো নজির কেউ দেখাতে পারবেন না।
এসব দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে আমরা যাকে দোষ দিই সেটা হলো আমাদের অদৃষ্ট। বলতে গেলে প্রায় শতভাগ মানুষই আমরা এইসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে বা বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এটাকে নিয়তির পরিহাস মনে করি! সমাজের ভুল, আমাদের সবার ভুলকে আমরা নিয়তির ওপর ছেড়ে দিই। সে জন্যই আমাদের সমাজে এই ধরনের দুর্ঘটনা বেশি বেশি ঘটে। যত দিন পর্যন্ত আমরা এই সামাজিক দুর্ঘটনার জন্য উপরওয়ালাকে দায়ী করব, নিয়তিকে দায়ী করব, তত দিন এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমরা মুক্তি পাব না।
বিদ্যুৎজনিত দুর্ঘটনা, রাস্তা পারাপারের জন্য দুর্ঘটনা, পুকুর-নদী-সমুদ্রে সাঁতার কাটাসহ এই ধরনের সামাজিক দুর্ঘটনার জন্য আমরা আর অদৃষ্টের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের সচেতন করে তুলি। প্রয়োজন হলে প্রতিবছর স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরের শুরুর প্রথম ক্লাসের দিনে এই সম্পর্কে এক ঘণ্টা সবাইকে সচেতন করে তুলি। যেসব দুর্ঘটনা আমরা একেবারেই এড়াতে পারি না, সেগুলো হলো বজ্রপাত ও ভূমিকম্প। এই দুটি দুর্ঘটনার ব্যাপারে আমরা কোনো প্রতিরোধ করতে পারি না বা এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্য সব দুর্ঘটনার ব্যাপারে আমরা যদি সচেতন হই, নিজেদের জীবনকে ভালোবাসি; আমরা যদি মনে করি এই জীবন শুধু নিজেদের জন্য না, আমাদের পরিবারের জন্য, পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য, এই সমাজের জন্য, এই রাষ্ট্রের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ—সেই কথা ভেবে এইসব দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখি ও সমাজকে মুক্ত করি। এটাই হোক সামাজিক ও অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা রোধের মোটামুটি স্থায়ী ব্যবস্থা।
লেখক: আব্দুর রাজ্জাক
প্রকৌশলী
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নাম জুড়ে দিয়ে ওই তিন দলসহ মোট ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে রিট করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ১১টি দলের তালিকায় এলডিপির নামও
৩ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় বহুল পরিচিত একটি শব্দ হলো কালাজ্বর। শব্দটি কমবেশি আমরা সবাই শুনেছি। এমনকি কেউ কেউ কালাজ্বরে আক্রান্তও হয়েছি। কিন্তু এই জ্বরকে কালাজ্বর কেন বলা হয়? কালো রঙের সঙ্গে এর কি কোনো সম্পর্ক রয়েছে? জ্বরের প্রকারভেদে রঙের কি আদৌ কোনো ভূমিকা রয়েছে? যদি না থাকে তাহলে প্রশ্ন হলো, কেন এ জ্বরকে কালাজ্ব
৩ ঘণ্টা আগেসাংবাদিকদের হয়রানি করা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থল ও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ইমিগ্রেশনে যেভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, তা কেবল পেশাগত বাধার উদাহরণ নয়, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার ওপর একধরনের চাপ। এই ধরনের আচরণ রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনা ও মানব
৩ ঘণ্টা আগেবর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে নীতিনির্ধারণী একটি বিষয় অগ্রাধিকার বিবেচনার জন্য অপেক্ষমাণ আছে, আর তা হলো, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন করা, নাকি যথাশিগগির নির্বাচন আয়োজন করা? অনেক ধরনের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদের বিকল্প কিছু আছে বলে মনে হয় না।
১ দিন আগে