ফেসবুকে শেষ পোস্টে যা লিখেছিলেন ছাত্রলীগের পিটুনিতে নিহত কাউসার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ২২
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০: ২৪

‘আসছে ফাগুনে দ্বিগুণ নয়, ১৬ কোটি হব।’ এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যান চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাউসার মাহমুদ। ফাগুনে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা ১৬ কোটি হলো ঠিকই, কিন্তু শুধু তিনিই নেই। ছাত্রলীগের পিটুনিতে কিডনি বিকল হওয়া কাউসার ৭০ দিন পর মারা গেলেন।

নগরের নিউমার্কেটে আন্দোলনের ছবি ২ আগস্ট প্রোফাইলে দিয়ে কাউসার মাহমুদ লিখেছিলেন, ‘আসছে ফাগুন দ্বিগুণ নয়, ১৬ কোটি হব।’ ওটাই ছিল তাঁর শেষ ফেসবুক পোস্ট। দুই দিন পর সেই নিউমার্কেটে ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি।

কাউসার মাহমুদ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের আব্দুল মোতালেবের ছেলে। আব্দুল মোতালেব নগরের চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ রোডে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে থাকেন।

কাউসারের মৃত্যুর খবরে কাঁদছে পুরো চট্টগ্রাম। কাউসারের ২২তম জন্মদিন ছিল ৯ আগস্ট। সেদিন ফেসবুকে জন্মদিনের কেক ও চিকিৎসাধীন কাউসারের ছবি পোস্ট করে তাঁর ছোট ভাই সুলতান মাহমুদ লিখেন, ‘হ্যাপি বার্থ ডে ভাইয়া। আজ দুই মাস ১০ দিন হয়ে গেল ভালো করে কথা বলতে পারি না। তোর সঙ্গে একদিন ঝগড়া না করলে ভালো লাগে না। কিন্তু আজ কত দিন তোর সঙ্গে কথাই বলতে পারি না।’

শহীদ কাউসারের বন্ধু তানজিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘আমাদের ৪১ ব্যাচের কাউসার মাহমুদ আল্লাহর জিম্মায় ফিরে গেল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা আলা আমার বন্ধুকে জান্নাত নসিব করুন। দুই বছরের ভার্সিটি লাইফে তোর সঙ্গে ছোট ছোট অনেক মেমোরি, ট্যুর, ইফতার, এক্সারসন সব জায়গায় তুই ছিলি প্রাণবন্ত। মিস করব রে তোরে।’

কাউসার মাহমুদের বাবা আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাউসারের জানাজা হয়। সেখান থেকে লাশ চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাতে আব্দুর রহমান মাতব্বর জামে মসজিদে জানাজা শেষে পাশের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।’

যেভাবে আহত হন কাউসার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কাউসার মাহমুদ। নগরের নিউমার্কেট ও দেওয়ানহাট কেন্দ্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ৪ আগস্ট নিউমার্কেটে ছাত্র-জনতার পূর্বঘোষিত আন্দোলনে অংশ নেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কাউসার। তখন ছাত্রলীগের বেধড়ক পিটুনিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরদিন ৫ আগস্ট নগরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কাউসারকে। চিকিৎসকেরা জানান, গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত কাউসারের দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। দুই সপ্তাহ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে কাউসারকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। ৭০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শাহাদাত বরণ করেন এই শিক্ষার্থী।

নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলে গিয়েছিলেন কাউসার। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাউসার বলেন, ‘পুলিশের টিয়ার শেল খেয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই ছাত্রলীগে বাড়ি মারে। আব্বু-আম্মুকে কিছু না জানিয়ে ঘরে শুয়ে পড়ি। পরে আমার ব্যথা আর খিঁচুনি ওঠে।’

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিউমার্কেটে আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম আরিফ (১৮) শাহাদাত বরণ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত