Ajker Patrika

‘কাসাভা’য় সাফল্যের আশা

নুরুল আলম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২১, ২১: ৪৬
‘কাসাভা’য় সাফল্যের আশা

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘কাসাভা’ চাষ। একই সঙ্গে দেশের কৃষি খাতে আশার আলো জাগাচ্ছে সম্ভাবনাময় উচ্চ ফলনশীল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই সবজি। কৃষকদের কাছে এটি শিমুল আলু, কাঠ আলু ও ঠেংগা আলু নামেই বেশি পরিচিত। এ কাসাভা দিয়ে তৈরি করা হয় গ্লুকোজ, ফুড আইটেম, চিপস ও ওষুধের কাঁচামাল। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৩০০ একর জমিতে কাসাভা আবাদ করেছেন কৃষকেরা। 

করেরহাট ইউনিয়নের চত্তরুয়া এলাকার কাসাভা চাষি জাহেদ উদ্দিন বলেন, আগে পাহাড়ে আধা, হলুদ ও সবজির চাষ বেশি হতো। এতে পরিশ্রম ও খরচ বেশি হলেও তুলনামূলক লাভ কম ছিল। তবে কাঠ আলু (কাসাভা) চাষে খরচ অনেক কম। তবে লাভ বেশি। ১২ মাস ফসল তোলা যায়। চাষাবাদের সুদবিহীন ঋণ দেওয়া হয় প্রাণ কোম্পানি থেকে। আবার ন্যায্যমূল্যে দিয়ে ফসল নেয় তারা। কাসাভা খেতে কাজ করা ৬৫ বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম বলেন, করেরহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর বাড়ি। ১৮ বছর আগে ৫০ টাকা মজুরি দিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। এখন প্রতিদিন মজুরি পান ২০০ টাকা করে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ১৭ বছর আগে এক প্রবাসী থাইল্যান্ড থেকে চারা এনে এলাকায় কাসাভা চাষ শুরু করেন। তখন ফসল কিনত ঢাকার ওষুধ কোম্পানি রহমান কেমিক্যাল। ২০১৭ সালে রহমান কেমিক্যাল বিক্রি হয়ে যায়। এরপর কাসাভা চাষে বিনিয়োগ শুরু করে প্রাণ। 

প্রাণের ম্যানেজার (অপারেশন) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, তাঁদের কোম্পানি প্রতি একরে চাষিদের ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদবিহীন ঋণ দেয়। ফসল ওঠানোর পর চাষিরা নিজ খরচে কোম্পানির হবিগঞ্জের কারখানায় কাসাভা পৌঁছে দেন। পরে ঋণের টাকা কেটে বাকি টাকা চাষিকে দেওয়া হয়। 

চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান ও পুষ্টিবিদ মরিয়মুন নেছা বলেন, কাসাভায় সাধারণভাবে ৩০-৪০ ভাগ শর্করা, ১-২ ভাগ প্রোটিন ও ৫৫-৬০ ভাগ জলীয় অংশ বিদ্যমান। আর আলুর তুলনায় কাসাভাতে দ্বিগুণেরও বেশি শর্করা থাকে। তাই এটি আলুর থেকে অনেক বেশি পুষ্টিকর। এ ছাড়া শক্তিবর্ধক ও শরীরকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখে। তিনি আরও বলেন, সম্ভাবনাময় ফসল কাসাভা হতে পারে দেশের মানুষের নিয়মিত খাদ্যতালিকার একটি। 

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, কাসাভা চাষের পদ্ধতি খুব সহজ। খরচও তুলনামূলক কম। লাভও বেশি। সরকারি সহযোগিতা পেলে কৃষকেরা কাসাভা চাষে আরও উদ্বুদ্ধ হবে। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, কাসাভা চাষে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হবে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান বলেন, দিন দিন কাসাভা চাষে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। চাষিদের এ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত