পাঁচ জুট মিলের ইজারা চুক্তি হচ্ছে না কাল 

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৪: ১৪
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ১৯

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উৎপাদন বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেএফডি জুট মিলসহ দেশের পাঁচটি জুট মিলকে বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের চুক্তি সম্পাদনের কথা ছিল কাল বৃহস্পতিবার। কিন্তু বিজেএমসির চেয়ারম্যানের অসুস্থতার কারণে সেই চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ পেছানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেএফডির প্রকল্পপ্রধান নুরুল আলম ভূঞা। 

জানা গেছে, বিজেএমসির পত্র সূত্র নম্বর-২৪.১৪. ০০০০.১০৪. ০২.০১৩. .১৬. ১৫ তারিখ ১৪.০১. ২০২০ অনুযায়ী মঞ্জুরি কমিশন ২-১৫ কার্যকর হওয়ায় ১ জুলাই ২০১৫ থেকে ২ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত একজন শ্রমিকের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি হিসেবে ৬ বছরের পাওনা ৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা হয়, যা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ১৬ ও ১৭ এবং চাকরির শর্তাবলি আইনের ধারা ৩-১১ অনুযায়ী শ্রমিকদের ৬০ দিনের নোটিশ মেয়াদের পূর্ণ মজুরি মাসিক ২৪ হাজার টাকা হিসেবে একজন শ্রমিকের পাওনা ২ মাসে ৪৮ হাজার টাকা হয়। করোনাকালীন সাধারণ ছুটির মজুরি একজন শ্রমিকের দৈনিক ৬০০ টাকা হিসেবে ৪০ দিনের মজুরি ২৪ হাজার টাকা। ফলে সবকিছু মিলে শুধু কেএফডি জুট মিলের ১ হাজার শ্রমিকের পাওনা দাঁড়ায় ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। 

সব কটি মিলের শ্রমিকসংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। এসব শ্রমিকের মোট পাওনা প্রায় ৪৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু শ্রমিকদের এসব পাওনা পরিশোধ না করেই মিল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে চাকরিহারা এসব শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এ বিষয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগ কেএফডি জুট মিলস শাখার সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম বলেন, কেএফডি ছাড়াও দেশের আরও চারটি জুট মিলসকে দরপত্র যাচাই শেষে ইজারা দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার হাফিজ জুট মিলসও রয়েছে। বাকি তিন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস, খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস ও নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস। 

ফজলুল করিম আরও বলেন, ‘কেএফডিতে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এসব শ্রমিকের মজুরি কমিশনের বকেয়া, করোনাকালীন মজুরি ও সাধারণ ছুটির পূর্ণ মজুরি বাবদ প্রায় সোয়া ৬ কোটি টাকা পাওনা বাকি আছে। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছি।’ 

এ ছাড়া রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি এবং সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. মো. হাবিব মিল্লাত এমপিও প্রধানমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বরাবর সুপারিশ করেছেন। কিন্তু এখনো শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে কার্যকর পদক্ষেপ কোনো পক্ষই গ্রহণ করেনি। নেওয়া হয়নি পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও। 

অন্যদিকে, চুক্তি স্বাক্ষর কবে নাগাদ হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য অফিশিয়ালি পাননি বলেও জানান জুট মিলস শাখার সাধারণ সম্পাদক। 

কেএফডির প্রকল্পপ্রধান নুরুল আলম ভূঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই দেখছে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।’ 
 
উল্লেখ্য, লাগাতার লোকসানের মুখে থাকা দেশের ২৫টি জুট মিল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে ২০২১ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। এতে দেশি-বিদেশি ৫৯টি প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়। সেই দরপত্র যাচাইবাছাই শেষে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঁচটি জুট মিল ইজারা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত