বিএম ডিপো দুর্ঘটনার পরও সতর্কতা ছিল অপর্যাপ্ত: জেলা প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, ‘এই দুর্ঘটনাটি (সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট) আমাদের চোখে আঙুল দেখিয়ে দিল-আট মাস আগে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ৫০ জনের প্রাণহানির ঘটনার পরও আমরা কিন্তু পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। আমরা কমপ্লায়েন্স হতে পারিনি। যত্রতত্র শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে।’

আজ সোমবার দুপুরে কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত সার্কিট হাউসে কারখানা মালিকদের নিয়ে এক সভায় জেলা প্রশাসক এ মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম জেলার ভারী ও মাঝারি শিল্প প্রবণ এলাকায় দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে এই সভা আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, গত দুই মাসে ৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও ২০ লাখ টাকার অধিক জরিমানা করা হয়েছে। এক বছরের জেল পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানায় কোথাও কিন্তু কমপ্লায়েন্স পাওয়া যায়নি। কারখানাগুলোকে কমপ্লায়েন্সে আনার জন্য আজকের এই সভা। আমরা আশা করব, এই সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে যাতে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে পারি। 

সিদ্ধান্তের বিষয়ে আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রতি মাসে কারখানার মালিকদের নিয়ে সভা করা হবে। বর্তমানে যেসব কারখানাগুলো আছে আর নতুন করে যেসব কারখানা আসছে। সেগুলো বিষয়ে বিষয়ে দুটি সিদ্ধান্ত থাকবে। নতুন যেসব কারখানাগুলো আসছে সেগুলো শতভাগ কমপ্লায়েন্স ছাড়া কোনোভাবে উৎপাদনে যেতে পারবে না। এটা কল কারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরকে নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে যেসব কারখানা আছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। এগুলোকে আমরা কীভাবে কমপ্লায়েন্স আনতে পারি সেটা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। এ জন্য আমরা একটি ক্রাস প্রোগ্রাম চালু করব। কারখানাগুলোকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন এই তিন ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হবে। যেগুলো রেড ক্যাটাগরির কারখানা সেগুলোতে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। টাস্কফোর্স কমিটি কারখানাগুলো পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শনের প্রেক্ষিতে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা কারখানাগুলোকে মেনে চলতে হবে।

সভায় দুর্ঘটনায় আশপাশে ক্ষতিগ্রস্তদেরও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, আমাদের তথ্যে সীমা প্ল্যান্টে দুর্ঘটনায় ২ কিমি. এলাকা জুড়ে বিভিন্ন ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে হবে।

বিএম ডিপো কন্টেইনার ডিপো বিস্ফোরণে নিহত ও আহতের বাইরেও আরও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো ক্ষতিপূর্ণ পায়নি। এই বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে একটা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে হবে। এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাতে তদন্ত রিপোর্টে থাকে, সে জন্য তদন্ত কমিটিকে দেখতে হবে।

এ সময় জেলা প্রশাসক মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সামান্য কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের হাতে তুলে দিলে হবে না। আপনারা আপনাদের মানসিকতা পরিবর্তন করবেন।

জানা যায়, বৈঠকে সব কারখানার মালিকদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ মালিকই অনুপস্থিত ছিলেন। এটা নিয়ে সভার শুরুতে আক্ষেপ করেন জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া সভায় পুলিশ, কল কারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত