মেঘনায় মাছ আহরণ: নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে জেলেদের হয়রানির অভিযোগ

চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ০৮

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত মেঘনা নদীর প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে মাছ আহরণ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে নিষিদ্ধ সময় ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে তাঁদের নৌ পুলিশ হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে এটি নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন।

সরেজমিন সদর উপজেলার দোকানঘর, সাখুয়া, বহরিয়া, হরিণা ফেরিঘাট এবং আখনের হাট এলাকার জেলেদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। নদীতে নৌ পুলিশের হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ তাঁদের বেশ পুরোনো। মা ইলিশ ও জাটকা আহরণের দুটি নিষিদ্ধ সময় ছাড়াও পুলিশ তাঁদের জালের ধরন সঠিক না থাকার অজুহাতে হয়রানি করে থাকে বলে অভিযোগ তাঁদের। জেলেরা বলছেন, তাঁদের বিভিন্ন অঙ্কে নগদ এবং বিকাশে টাকা দিলে ছেড়ে দেয় নৌ পুলিশ। না হয় মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হয়।

হানারচর ইউনিয়নের জেলে মজিদ সৈয়াল ও নাছির হোসেন বলেন, ‘যারা নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ আহরণ করে, তাদের আইনের আওতায় আনলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সুতার জাল দিয়ে মাছ ধরতে গেলেও নৌ পুলিশ হয়রানি করে। তারা জেলেদের আটক করে দূরে নিয়ে টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়। হাইমচর থেকে চাঁদপুর সদর পর্যন্ত সব জেলের একই অবস্থা।’

একই এলাকার আরেক জেলে আব্দুল হক বলেন, চাঁদপুর নৌ থানার পুলিশ সবচেয়ে বেশি হয়রানি করে। তারা কোনো নিয়ম মানে না। তাদের ইচ্ছে হলেই আটক করে। তাদের কারণে গরিব জেলেরা মাছ আহরণে নামতে পারেন না।

ওই ইউনিয়নের গোবিন্দয়া গ্রামের জেলে ফারুক জমাদার ও এনায়েত হোসেন বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ডা. দীপু মনি নির্বাচনী প্রচারণা এলে বহু জেলে হয়রানি সম্পর্কে অভিযোগ করেন। আমরাও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পর ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নদীতে নৌ পুলিশের হয়রানি চলছেই।’

হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে মতিউর রহমান সৈয়াল বলেন, ‘আমাদের এলাকায় শত শত জেলে। এমন কোনো জেলে নেই, যারা নৌ পুলিশকে টাকা দেয়নি। ৫ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় তাদের। তারা সুতার জাল দিয়ে মাছ আহরণ করলেও আটক করে টাকা আদায় করে। বিশেষ করে বিকাশে এই টাকা লেনদেন হয়। আমরা এই হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে চাই।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান এ বিষয়ে বলেন, ‘জেলেদের হয়রানির বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। কারেন্ট জাল দিয়ে সব সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ। সুতার জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারবে এবং আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সুতার জাল প্রণোদনা দিয়ে আসছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে নৌ পুলিশ এবং জেলেদের মধ্যে একটি ভুল-বোঝাবুঝি রয়েছে। জেলেরা মনে করে. শুধু মা ইলিশ এবং জাটকা সংরক্ষণের সময় নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরা যাবে না। আসলে তা নয়, বছরের সব সময়ই মৎস্য বিভাগ থেকে কারেন্ট জালসহ নিষিদ্ধ কোনো জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা নিষেধ। এখন অনেক জেলে বোঝেন আবার কোনো জেলে না বুঝে, এসব জাল দিয়ে মাছ আহরণ করেন। যে কারণে নৌ পুলিশ তাঁদের আইনের আওতায় আনতে বাধ্য হয়।’

কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘জেলেদের কাছ থেকে কোনো পুলিশ সদস্যের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে আমরা সতর্ক। আমি বিভিন্ন সময় জেলেদের কাছে আমার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছি। এমন কিছু হলে যেন আমাকে জানানো হয়। ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত