Ajker Patrika

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মাছ শিকার মেঘনায়

  • মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
  • বিএনপি নেতাদের মদদে মাছ ধরা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মো. ইব্রাহিম, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) 
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদী থেকে মাছ শিকার করা হচ্ছে। সম্প্রতি মাতাব্বরহাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদী থেকে মাছ শিকার করা হচ্ছে। সম্প্রতি মাতাব্বরহাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে তা মানা হচ্ছে না। স্থানীয় জেলেরা প্রকাশ্যে নদীতে মাছ শিকার করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এর পেছনে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মদদ আছে।

সম্প্রতি সাহেবেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার এলাকায় মেঘনার পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, ৭-৮টি নৌকায় জাল স্তূপ করে রাখা আছে। এগুলো নিয়ে দুপুরে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জেলেরা। এ ছাড়া পাটারিরহাট ইউনিয়নের মাছঘাট এলাকায় গিয়ে ৪-৫টি নৌকাকে নদীতে মাছ ধরতে দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিষেধাজ্ঞার প্রথম সপ্তাহে মাছ ধরা কিছুটা বন্ধ থাকলেও এখন আর তা মানা হচ্ছে না। নদী থেকে অবাধে মাছ শিকার করে রাতে পিকআপ ভ্যানে করে নোয়াখালী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলা সদরের হাজিরহাটসহ বিভিন্ন বাজারে তা বিক্রি করা হচ্ছে।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় দুই নেতা বিভিন্ন দপ্তরকে হাত করে জেলেদের দিয়ে মাছ শিকার করাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে পাটারিরহাট ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও পাটারিরহাট মাছঘাটের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক তালুকদার মেঘনা নদীর লুধুয়া থেকে পাটারিরহাট এবং উপজেলা যুবদলের সদস্য ও সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. হেলাল মাতাব্বরহাট থেকে মতিরহাট পর্যন্ত জেলেদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। দুজনের অধীনে ২০-২৫টি নৌকা রয়েছে। এ ছাড়া কালকিনি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম সুমন, মজিদ মেম্বারসহ বিএনপির আরও কয়েকজন নেতা মাছ শিকার করছেন।

জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক তালুকদার দাবি করেন, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি নদীর পাড়ে যান না। যে জেলেরা মাছ ধরছেন, তাঁদের পুলিশে দেওয়ার জন্য বলেন তিনি। অন্যদিকে মো. হেলাল বলেন, ‘আমি অভিযানের পক্ষে। কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নই। দক্ষিণে রাজ্জাক তালুকদার ও বেলাল মাঝি এসবের সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে কথা বলেন, সব তথ্য পেয়ে যাবেন।’

অভিযানের বিষয়ে কথা হলে কমলনগর কোস্ট গার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা একদিকে অভিযান দিলে অন্যদিকে মাছ ধরেন জেলেরা। এ বিশাল নদী আমাদের একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ আর তাঁদের হাত করার অভিযোগটি সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নদীতে অভিযানে যাওয়ার কোনো নিয়ম নেই। ওপরে প্রকাশ্যে মাছ বিক্রি ও পাচার যারা করছে, তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’

এদিকে কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা জানান, তাঁদের অভিযান অব্যাহত আছে। নদীতে মাছ ধরার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

যোগাযোগ করা হলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি মো. রাহাত উজ জামান জানান, নিষেধাজ্ঞা চলার সময় মেঘনায়

মাছ ধরার বিষয়টি তিনি জানেন না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত