Ajker Patrika

ফর্টিস হাসপাতালের নামে শতকোটি টাকা লোপাট

  • ফর্টিস চেইন হাসপাতালের নাম দেখে এএফসি হেলথকে ঋণ দিয়ে বিপাকে ইবিএল
  • প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা সুদাসলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা
  • পুঁজিবাজার থেকেও মোটা অঙ্কের অর্থ তুলে নিয়েছে এএফসি হেলথের দুই প্রতিষ্ঠান
ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ০৫
ফর্টিস হাসপাতালের নামে শতকোটি টাকা লোপাট

ভারতীয় চেইন হসপিটাল ফর্টিস এসকর্টস হার্ট ইনস্টিটিউটের নাম ভাঙিয়ে শতকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে এএফসি হেলথ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও কুমিল্লায় ‘ফর্টিস’ নামে চারটি শাখা হাসপাতাল দেখিয়ে ব্যাংক থেকে এবং দুটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কারখানা দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা তুলে নেয়।

এর মধ্যে সব সেবা বন্ধ হয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারবাজারে থাকা দুই কোম্পানির লেনদেন চলছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত বিনিয়োগকারীরা। আর ব্যাংক চিন্তিত অনাদায়ি ঋণ নিয়ে।

ফর্টিস চেইন হাসপাতালের নাম দেখে এএফসিকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়া ব্যাংকটির নাম ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল)। হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গত সাত বছরেও শোধ করেনি এএফসি হেলথ লিমিটেড, যা এখন সুদাসলে দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি টাকায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতের একটি নামকরা হসপিটাল ফর্টিস। এএফসি হেলথের মাধ্যমে দেশে হার্টের চিকিৎসাসেবা চালু করে ফর্টিস। তখন এএফসির এই উদ্যোগকে অনেকে স্বাগত জানায়। চট্টগ্রামে ফর্টিসের স্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে ২০১৮ সালে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইবিএল। কিন্তু হাসপাতাল নির্মাণের নামে ঋণ নিলেও অভ্যন্তরীণ নানা জটিলতায় দীর্ঘদিনে হাসপাতাল নির্মাণ করতে পারেনি উদ্যোক্তারা। এতে ব্যাংকের বিনিয়োগ আটকে যায়, যা বর্তমানে সুদাসলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

পাওনাদার ব্যাংক ও আদালতের তথ্যমতে, ৭২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ঋণখেলাপি হওয়ায় এএফসি হেলথের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর অর্থঋণ মামলা করে ইবিএল আগ্রাবাদ শাখা। এতে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের সঙ্গে এএফসি হেলথের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড ও অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডকেও বিবাদী করা হয়। মামলায় ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সাত কর্ণধারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন অর্থঋণ আদালতের তৎকালীন বিচারক মুজাহিদুর রহমান।

নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন এএফসি হেলথ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুয়েল খান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম সাইফুর রহমান, পরিচালক মো. আফজাল, মো. জিয়া উদ্দিন, সাইদুল আমিন, মো. শামসুদোহা তাপস এবং মাহবুব আরাব মজুমদার।

ইবিএলের লিগ্যাল কর্মকর্তা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আদেশের পর প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারেরা ঋণটি পুনর্গঠনের আবেদন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী শ্রেণীকৃত ঋণ পুনর্গঠন করার সুযোগ নেই। তাই ব্যাংক এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার আদেশটি প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করেছেন কর্ণধারেরা। ওই আবেদনে সিকিউরিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা, কুমিল্লা ও খুলনার ১৯১ শতক জমি সংযুক্ত করার আবেদনও করেছেন। আমরা ওই জমির মূল্য পর্যবেক্ষণ করে আদালতে মতামত জানাব।’

এই ঋণ এর আগে দুবার পুনঃ তফসিল করা হলেও ঋণ পরিশোধ করা হয়নি। ব্যক্তিগত সিকিউরিটিতে দেওয়া এই ঋণের কোনো বন্ধকি সম্পত্তিও ব্যাংকের কাছে নেই বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা।

ইস্টার্ন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ দেওয়া হলেও এএফসি হেলথের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে ঢাকার নিকেতন এবং তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের সাত কর্ণধারেরও ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে ঢাকার সূত্রাপুর, পুরানা পল্টন, তেজগাঁও, নিকেতন, শ্যামনগর এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এএফসি হেলথ লিমিটেড ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম, খুলনা ও কুমিল্লায় টারশিয়ারি লেভেল বিশেষায়িত কার্ডিয়াক কেয়ার চেইন হাসপাতাল পরিচালনা করে। এ ছাড়া যশোরে বেসিক মেডিকেল সেবায় আউটরিচ সেন্টার এবং ময়মনসিংহে মাল্টিডিসিপ্লিনারি হাসপাতাল চালুর উদ্যোগও নিয়েছিল এএফসি। কিন্তু এরই মধ্যে এএফসির সব প্রকল্প কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের শেভরন হসপিটালের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে শেভরনের দুটি ফ্লোর (৮ ও ৯ তলা) ভাড়া নিয়ে ফর্টিস হার্ট ইনস্টিটিউট নামে বিশেষায়িত কার্ডিয়াক কেয়ার চালু করে এএফসি হেলথ। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও চিকিৎসক ও রোগীর তেমন সাড়া মেলেনি। হাসপাতালের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি কিনে অর্থ ব্যয় করলেও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ছিল। ফলে ২০২১ সালে হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির কাছে ভাড়া বাবদ শেভরনেরও প্রায় ২ কোটি টাকা পাওনা বাকি আছে এএফসি হেলথের কাছে।

এদিকে দেশের তিন বিভাগীয় শহরে ফর্টিস হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও শেয়ারবাজারে রয়েছে এফসি হেলথের দুই প্রতিষ্ঠান।

এর মধ্যে একটি হলো এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড এবং অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যমতে, এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেডের মোট শেয়ার ১১ কোটি ৫২ লাখ ১৬ হাজার ২০০। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ২৭ দশমিক ৮৪, আর্থিক সংস্থার কাছে ৩৩ দশমিক ১৮ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার ৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

অপর কোম্পানি অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডের মোট শেয়ার ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে পরিচালকদের হাতে ১২ দশমিক ৪, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে আছে ২০ দশমিক ১৭, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে শূন্য দশমিক ২৭ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গতকাল ৮ দশমিক ৩০ টাকায় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অ্যাকটিভ ফাইন বাজারে আসে ২০১০ সালে।

২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদনের জন্য এএফসি হেলথ লিমিটেড প্রসপেক্টাসে মিথ্যা বিবৃতি ও ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে বলে অভিযোগ আনে ভারতের ফর্টিস এসকর্টস।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) পাঠানো এক চিঠিতে ফর্টিস অভিযোগ করে, প্রসপেক্টাসে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে এএফসি হেলথকেয়ার বিনিয়োগকারী ও জনসাধারণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, এএফসি হেলথকেয়ার খুলনা ও চট্টগ্রামে কার্ডিয়াক ও বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা দিতে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। তবে এএফসি ওই চুক্তি ভঙ্গ করে কুমিল্লা ও যশোর জেলায় তাদের হাসপাতালেও ফর্টিস ও এসকর্টস ব্র্যান্ড ব্যবহার করছে, যা চুক্তির পরিপন্থী। এ ছাড়া এএফসি হেলথকেয়ারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পরিশোধ না করার অভিযোগ আনা হয় ওই চিঠিতে।

এর এক মাস আগে ১৬ সেপ্টেম্বর এএফসি হেলথকেয়ারকে পুঁজিবাজার থেকে অভিহিত মূল্যে ১৭ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেয় এসইসি।

এএফসি হেলথ লিমিটেডের পরিচালক সাইদুল আমিন বলেন, ‘হসপিটালের প্রজেক্টগুলোতে বিনিয়োগের পর প্রফিটে আসতে সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন হাসপাতালের কার্যক্রম স্থবির থাকায় আমাদের লোকসান হয়েছে।’

সাইদুল আমিন আরও বলেন, ‘ইবিএলের ঋণটি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি। দুটি কারখানার একটিতে স্বল্প পরিমাণে উৎপাদন চলছে। কারখানা দুটি পুরোদমে চালু করতে আমরা বিনিয়োগ খুঁজছি।’ ফর্টিস নাম দিয়ে শুরু করা হাসপাতালগুলোর মধ্যে কুমিল্লার হাসপাতালটি এএফসি নামে চলছে বলেও দাবি করেন তিনি।

শেয়ারবাজারে লেনদেন চললেও কারখানার উৎপাদন বন্ধ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের দিকে খুলনার বটিয়াঘাটায় কৃষিজমির ওপর নির্মাণ করা হয় এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড। এরপর ২০১৬-১৭ সালের দিকে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদিত হয়। তবে করোনার পর থেকে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত গ্রুপটির অপর কারখানা অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসে করোনার আগে প্রায় ৩১টি প্রোডাক্ট তৈরি হতো। তবে দুই বছর ধরে কারখানার উৎপাদন অনেকটা বন্ধ।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাকটিভ ফাইনের কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ম্যানেজার বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে কারখানার অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ। তবে কারখানা একেবারে বন্ধ হয়নি। এখনো কিছু কিছু প্রোডাক্ট প্রোডাকশন হচ্ছে এবং মার্কেটে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাবিতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে: ডিনদের পদত্যাগ ইস্যুতে ছাত্রদল

রাবি প্রতিনিধি 
রাবিতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে: ডিনদের পদত্যাগ ইস্যুতে ছাত্রদল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগের ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে শাখা ছাত্রদল। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে তাঁরা জানান ক্যাম্পাসে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করছে।

বিবৃতিতে ছাত্রদল নেতারা বলেন, ‘রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের দেওয়া হুমকিমূলক বক্তব্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি অশোভন এবং অছাত্রসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ। একজন ছাত্রনেতার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ জ্ঞানচর্চার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে বারবার মারমুখী ও অশালীন আচরণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তথাকথিত “তালা ঝোলানো” সংস্কৃতি ফ্যাসিবাদী মানসিকতারই প্রতিফলন। এর আগেও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যসহ একজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, যা সারা দেশের শিক্ষক সমাজের কাছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।’

ডিনদের পদত্যাগের বিষয়টি কেন্দ্র করে তারা বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মব-সন্ত্রাসী কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। সালাহউদ্দিন আম্মারের মতো কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা চালালে ছাত্রদলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।’

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা। তবে তথ্য-উপাত্ত ছাড়া অহেতুক ট্যাগিং ও অপপ্রচারের মাধ্যমে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।

এদিকে ছাত্রদলের বিবৃতি প্রসঙ্গে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউট ছাত্রদল যেহেতু আমাকে নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সেহেতু আমি সঠিক পথেই আছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরের নেতা-কর্মী নাকি আমাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘মনোনয়নপত্র নেওয়ার দিন মনে আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের না, রাজশাহীর সর্বস্তরের কর্মী নিয়েও লাভ হয় নাই। সালাহউদ্দিন আম্মার একা দাঁড়াইয়া ছিল, ওই দিনও সব নেতা-কর্মীর স্লোগান, হুমকি-ধমকি দিয়ে একটা চুলও ছিঁড়তে পারে নাই। ডিনদের পদত্যাগ করাইলাম বাকি কাজও করে যাব।’

একই দিন রাতে জিএস আম্মারের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘একজন নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে রাকসুর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বশীলতা, সংযম ও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বক্তব্যে তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র ফুটে উঠেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

তাঁরা আরও বলেন, ‘অনুষদ অধিকর্তাদের নির্বাচিত মেয়াদ সমাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য তাঁদের দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কারও ভিন্নমত বা আপত্তি থাকলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ভেতরে আলোচনা, আবেদন কিংবা প্রতিবাদের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই পথ অনুসরণ না করে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য, কুরুচিপূর্ণ ভাষা প্রয়োগ এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার হুমকি প্রদান আইনশৃঙ্খলা, শিষ্টাচার ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী।’

উল্লেখ্য, গতকাল সকাল থেকে আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ দাবিতে আম্মারের নেতৃত্বে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। এতে ডিনদের চেম্বারে তালা ঝোলানোর পাশাপাশি প্রশাসনের সকল দপ্তরে তালা দেন তাঁরা। পরে এদিন রাতে এক সভায় ছয় ডিন তাঁদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রিমান্ডে নেওয়ার সময় কাশিমপুর কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু

গাজীপুর প্রতিনিধি
ওয়াসিকুর রহমান বাবু। ছবি: সংগৃহীত
ওয়াসিকুর রহমান বাবু। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রিমান্ডে নেওয়ার সময় হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। কারাগারের অফিস কক্ষে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মারা যাওয়া নেতার নাম ওয়াসিকুর রহমান বাবু (৪৩)। তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের এনায়েতুর রহমানের ছেলে। বাবু রাজধানীর বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সুপার আল মামুন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় ঝটিকা মিছিল করার সময় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন ওয়াসিকুর রহমান বাবু। পরে ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ স্থানান্তর করা হয়। ওই মামলায় আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে পুলিশের একটি দল তাকে হেফাজতে নিতে কারাগারে আসে। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলাকালে তাকে অফিস কক্ষের (ভর্তি শাখা) একটি চেয়ারে বসানো হয়। এ সময় তিনি হঠাৎ চেয়ার থেকে ঢলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ঘটনায় পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনার ৩৬ আসন: বেশি ঝুঁকিতে ৮৪২ কেন্দ্র

  • সন্ত্রাসকবলিত এলাকা বিবেচনায় তিন ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে।
  • বিভাগে মোট ৫ হাজার ১৩৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।
  • মহানগরীর ৭৯টি ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৯
ভোট
ভোট

খুলনা বিভাগের ৩৬টি সংসদীয় আসনে মোট ৫ হাজার ১৩৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৮৪২টি ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি জেলার ৩৪টি আসনে ৭৬৩টি এবং খুলনা মহানগরীর দুটি আসনে ৭৯টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) রয়েছে ১ হাজার ৮৫১টি ভোটকেন্দ্র।

প্রতিটি থানা থেকে সন্ত্রাসকবলিত এলাকা চিহ্নিত করে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিভাগের ১০ জেলায় ৩৪টি আসনে ৪ হাজার ৮২৪টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৭৬৩টি। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ১ হাজার ৭২৩টি কেন্দ্র এবং সাধারণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ৩৩৮টি।

সূত্র আরও জানায়, খুলনা জেলায় ১৩৫টি ভোটকেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে। যশোরে ১৮৬টি, বাগেরহাটে ১৮৬টি, সাতক্ষীরায় ৫৯টি, যশোরে ৭১টি, ঝিনাইদহে ৩৩টি, মাগুরায় ৫৫টি, নড়াইলে ৪২টি, কুষ্টিয়ায় ৯৯টি, চুয়াডাঙ্গায় ৫৭টি এবং মেহেরপুরে ২৭টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে।

জানতে চাইলে খুলনার অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি (অপারেশনস) শেখ জয়নুদ্দিন বলেন, তিন ক্যাটাগরিতে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় থানা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতকল্পে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে পুলিশ কাজ করবে। এ লক্ষ্যে পুলিশের ২৮টি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০টি প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, বাকি ৮টি প্রশিক্ষণ হবে।

খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসনের মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে দুটি আসন। খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) এবং খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী-আড়ংঘাটা) আসন। আসন দুটিতে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩০৯টি। এর মধ্যে ৭৯টিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ১২৮টিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ দুটি আসনে ৬৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে পুলিশ।

এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার আগেভাগেই মহানগরীর ভোটকেন্দ্রগুলো যাচাই করেছে পুলিশ। এতে ৩০৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ১২৮টিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, খুলনা জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ৮৪০টি। এর মধ্যে মহানগরীর ভেতরে রয়েছে ৩০৯টি কেন্দ্র। খুলনা-২ ও খুলনা-৩ আসনের সব ভোটকেন্দ্রই মহানগরীর ভেতরে। এর বাইরে খুলনা-১ আসনের ১৫টি এবং খুলনা-৫ আসনের ২২ কেন্দ্র পড়েছে নগরীর সীমানায়। এসব এলাকার সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শুধু মহানগরীর কেন্দ্রগুলোর ঝুঁকি আগে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে মহানগরীর ভেতরের ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে ঝুঁকি বিবেচনার জন্য থানার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়। মহানগর পুলিশের আটটি থানার ওসি গত মাসে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) ত ম রোকনুজ্জামান জানান, আগে ওই কেন্দ্রে কখনো গোলযোগ হয়েছে কি না, কোনো কারণে অতীতে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়েছে কি না, কেন্দ্রটি কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ির আশপাশে কি না, ভোটকেন্দ্রটি দুর্গম এলাকায় কি না, কেন্দ্রের চারপাশে সীমানাপ্রাচীর অথবা নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে কি না, অপরাধ করে দ্রুত সটকে পড়ার আশঙ্কা কেমন–এসব বিবেচনায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ তালিকা করা হয়।

খুলনা-৩ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন এবং উৎসবমুখর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, ভোটকেন্দ্র ও ভোটের পরিবেশ নিয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এবার ভোটকেন্দ্রে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন, কয়েক মাস আগে থেকেই তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এখনো প্রশিক্ষণ চলছে। ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ যেন না হয়, সে জন্য করণীয়, গোলযোগ হলে কী করতে হবে—এসব বিষয়ে বিশদভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগে এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, খুলনার ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১৪১টিতে নিজস্ব সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। নির্বাচনের আগে বাকিগুলোতে ক্যামেরা সংযোজন করা হবে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের কাছেও ক্যামেরা থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১ বছর ধরে নষ্ট ২৫০ সিসিটিভি ক্যামেরা

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪০
১ বছর ধরে নষ্ট ২৫০ সিসিটিভি ক্যামেরা

মাদারীপুর শহরে চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ কমাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। তবে প্রায় এক বছরের মধ্যে এসব ক্যামেরার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কোথাও ক্যামেরার বক্স থাকলেও ক্যামেরা নেই; কোথাও ক্যামেরা আছে, বক্স নেই; আবার কোথাও শুধু ঝুলে আছে তার। নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে বসানো এসব ক্যামেরা কার্যত কোনো কাজে আসছে না। দ্রুত ক্যামেরাগুলো মেরামতের দাবি শহরবাসীর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে তৎকালীন পুলিশ সুপার মাসুদ আলমের উদ্যোগে এবং মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতায় শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬০টি আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এসব ক্যামেরা মাদারীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল। তবে স্থাপনের কিছুদিন পর থেকে ধীরে ধীরে ক্যামেরাগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। বর্তমানে প্রায় এক বছর ধরে অধিকাংশ ক্যামেরা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে, কিন্তু এখনো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে শহরে দিনদুপুরে চুরি, ছিনতাই, ইভ টিজিংসহ নানা অপরাধ বাড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর নতুন শহর, কালীবাড়ি, সুমন হোটেল মোড়, কলেজ রোড, বটতলা, বাদামতলা, পুরান বাজার, শকুনি লেকপাড়, ডিসি ব্রিজ, ইটেরপুল, পুরাতন ও নতুন বাসস্ট্যান্ড, রেন্ডিতলা, মিলন সিনেমা হল এলাকা, কাজীর মোড়, থানার সামনে, কলেজের সামনে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জজকোর্ট এলাকাসহ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে বসানো ক্যামেরাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অচল। অধিকাংশ ক্যামেরায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। অনেক স্থানে ক্যামেরা ও সংযোগের তার চুরি হয়ে গেছে, আবার কোথাও ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে কোথাও শুধু বক্স, কোথাও শুধু ক্যামেরা, আবার কোথাও ঝুলে আছে তার। এতে করে শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

মাদারীপুর শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকার বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ডিসি ব্রিজ এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো প্রায় এক বছর ধরে নষ্ট। এই এলাকা শহরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্ধ্যার পর চায়ের দোকানগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের আড্ডা বসে এবং প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটে। ক্যামেরাগুলো সচল থাকলে অনেক অপরাধ আগেভাগেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।’

শকুনি লেকপাড় এলাকার খেলনা বিক্রেতা পারভীন বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেলের দিকে এখানে কয়েক শ মানুষ আসে। নানা বয়সের মানুষ ঘোরাফেরা করে। অনেক সময় নারীরা ইভ টিজিংয়ের শিকার হন। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো দ্রুত মেরামত করা হলে সাধারণ মানুষ অনেকটা নিরাপদে চলাচল করতে পারবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগির ক্যামেরাগুলো মেরামত করে আবার চালু করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত