ঢল-বৃষ্টিতে ভাসছে পূর্ব সীমান্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ০১: ৩৯

কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এবার ভাসছে দেশের পূর্ব সীমান্তের কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলা। সেখানে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বহু বাঁধ, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ। রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। তবে বন্যার্ত অনেকে বলছেন, তাঁদের এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় পরিবার নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরে কয়েকটি পৌর শহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিলেট অঞ্চলেও আবার পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।  
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও। বন্যায় সেখানে এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সেখানকার বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর।  

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতীর জেলা প্রশাসক তরিৎ কান্তি চাকমা তাঁর সরকারি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এ কথা জানিয়েছেন।

ফেনীতে বিপর্যস্ত জনজীবন: বন্যায় ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। মুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল ছুঁয়েছে বন্যার পানি।

পরশুরামের সলিয়া এলাকার বাসিন্দা হাবিব স্বপন বলেন, ‘আমাদের ত্রাণের চেয়ে এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। বন্যা পরিস্থিতি এমন হবে কেউ বুঝতে পারেনি। অনেকে রাত থেকে উদ্ধার করতে আসছে বললেও তেমন কাউকে দেখা যায়নি। সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। বন্যার সঙ্গে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেক বেশি ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।’

চৌদ্দগ্রামে হাসপাতালেও পানি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বন্যার অবনতি হয়েছে। প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় কেউই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারছে না। জানা গেছে, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের ৪২৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।

পানি ঢুকে পড়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতাল আঙিনায় বুকসমান পানি থাকায় অনেকেই আটকা পড়েছেন হাসপাতাল ভবনে। 

আখাউড়া স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট প্লাবিত: ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টার পর ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। পানির তোড়ে গাজীর বাজার এলাকায় একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের সবজিখেত, ফসলি জমি, পুকুরসহ এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর।

লক্ষ্মীপুরে পানিবন্দী চার লক্ষাধিক মানুষ:কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চারটি পৌর শহরসহ লক্ষ্মীপুরের নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দী প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বাসিন্দা। অনেকের বাড়িতে রান্না বন্ধ রয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

সীতাকুণ্ড ও আখাউড়ায় দুই নারীর মৃত্যু: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জুমচাষ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড়ি ঢলে নিখোঁজের ২৩ ঘণ্টা পর শিল্পী রানী দাস (২৫) নামে এক নারী শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার কুমিরা ডাল-চাল মিয়ার মাজার গেটসংলগ্ন এলাকার পাহাড়ি ছড়া থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। শিল্পী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝাড়পুকুর এলাকার নবদ্বীপ দাসের মেয়ে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী মারা গেছেন। গতকাল দুপুরের দিকে উপজেলার বীরচন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার পারভেজ মিয়ার স্ত্রী সুবর্ণা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

চকরিয়ায় পাহাড় ধসে পড়ল রেললাইনে: টানা বৃষ্টির কারণে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় পাহাড় ধসে পড়েছে রেললাইনের ওপর। এ সময় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ১০টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হননি। গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের গাইনাকাটা গ্রামে একটি পাহাড় রেললাইনের ওপর ধসে পড়ে। ঘটনাস্থলে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পর্যটক এক্সপ্রেস আটকে পড়ে। মাটি সরিয়ে প্রায় ৮ ঘণ্টা পর ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

বিপৎসীমার ওপরে বিভিন্ন নদীর পানি: ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুমিল্লার গোমতীর পানি। প্লাবিত হয়েছে চরগুলো। এতে শত শত বাড়িঘর জলমগ্ন হয়েছে। বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে সদর উপজেলার কটকবাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার গোমতী বাঁধের দুর্বল অংশ। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নদীপারের নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২০ গ্রামের বাসিন্দারা।

হু হু করে বাড়ছে হবিগঞ্জের খোয়াই নদের পানি। সব পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহররক্ষা বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে পানি। এ ছাড়া চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে।

মৌলভীবাজারে কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই ও মনু নদীর বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার বেশ কিছু রাস্তার ওপর দিয়ে পানি উপচে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত রয়েছে। জেলার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি বেড়েছে বরিশালের ৭টি নদ-নদীর। এতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। পানি উঠেছে নগরের বর্ধিত অনেক এলাকায়ও।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত