চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে পথসভা করেছেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদী। গতকাল রোববার রাতে চকরিয়া পৌরশহরের কাজী মার্কেটের সামনে তিন শতাধিক চেয়ার বসিয়ে, ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করে এ পথসভা করা হয়। এ সময় সড়কে প্রায় ৩ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধির ৭ ধারায় বলা হয়েছে, জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করা যাবে না। প্রার্থীদের পক্ষে কোনো ব্যক্তিও অনুরূপ জনসভা ও পথসভা করতে পারবেন না। কোনো পথসভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে সভার জায়গা ও সময় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে, যাতে ওই স্থানে চলাচল ও আইনশৃঙ্খলার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে কর্মী–সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে জড়ো হয়। এ সময় মহাসড়কের একপাশে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে পথসভা শেষ হলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিকল্প রাস্তা না থাকায় লোকজন ধাক্কাধাক্কি করে কোনো রকমে চলাচল করেছে। 

চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন সভায় সভাপতিত্ব করেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল করিম ছাড়াও পথসভায় বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার আলম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম ও পৌর যুবলীগের সভাপতি হাসানগীর হোছাইন। 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২০১৬ সালের আচরণ বিধিমালার ৭–এর ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষের নির্বাচন প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। তিক্ত, উসকানিমূলক, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক, মানহানিকর, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। 

এ পথসভায় চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি হাসানগীল হোছাইন ও চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার মুজিবুল হকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁদেরসহ অন্য বক্তাদের আপত্তিকর কথাবার্তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জড়িয়ে পড়েছে। সভায় হাসানগীর হোছাইন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমকে ‘ডাকাত জাফর’ উল্লেখ করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। 

এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি হাসানগীর হোছাইনের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। নাম বিকৃত করে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে কমিশনার মুজিবুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল কী বক্তব্য দিয়েছি সেটা এখন জেনে লাভ নেই।’ এই বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। 

কক্সবাজারগামী একজন পর্যটক মুহাম্মদ আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ সড়কটি কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু প্রার্থীর লোকজন পথসভা করেছেন। এ সভার কারণে যানজটের কবলে পড়ে চকরিয়া পৌরশহর পার হতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লেগেছে।’ 

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদীকে ফোন কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে পথসভার সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কে পথসভা করার কারণে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে, তা ঠিক। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ চেয়ারম্যান প্রার্থী সাঈদী দেখবেন। আচরণবিধি অনুযায়ী প্রশাসন যে ব্যবস্থা নেয়।’ 

মহাসড়কে পথসভার বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মহাসড়কে পথসভা করার খবর জানা নেই। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’ 

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পেলে আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

আগামী ২১ মে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৬১ হাজার ১০৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৬।