Ajker Patrika

মেয়াদপূর্তির ৩ বছরেও মিলছে না সঞ্চিত টাকা

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ০২ জুন ২০২৪, ১৩: ৪৬
মেয়াদপূর্তির ৩ বছরেও মিলছে না সঞ্চিত টাকা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভায়েরখীল এলাকার সত্তরোর্ধ্ব সকিনা বেগম। ২০১১ সালে একমাত্র মেয়ে মনোয়ারা বেগমের নামে মাসিক ২০০ টাকা করে ১২ বছরের জন্য একটি ডিপিএস করেন প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্সে। ২০২১ সালে মেয়াদপূর্তির পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সঞ্চিত টাকা ফেরত পাননি তিনি।

শুধু সকিনা নন, মেয়াদপূর্তির তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো টাকা পাননি সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ভায়েরখীল ও আলী চৌধুরীপাড়া এলাকার ফিরোজা, নাসিমা, মনোয়ারা বেগম, পারভীন আক্তারসহ শতাধিক গ্রাহক। সংস্থাটির বিভিন্ন প্রকল্পের আমানতকারীরা জমানো টাকা পেতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দিনের পর দিন হন্যে হয়ে ঘুরছেন।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, মেয়াদপূর্তির পর তাঁদের কাছ থেকে ডিপিএসের বইসহ টাকা জমানো বিভিন্ন প্রকল্পের বই ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মাঠকর্মী নিরুয়া আক্তার ও সংস্থাটির বিএম মনোয়ারা বেগমের মাধ্যমে জমা নেন সহকারী ম্যানেজার খাদিজা বেগম। মেয়াদ শেষে মাসখানেকের মধ্যে তাঁদের হাতে চেক তুলে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি ছিল। এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে তাঁরা সীতাকুণ্ড পৌর সদরের অফিসে ছুটে গেলে নানা ধরনের জটিলতার কথা বলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী নাসিমা আক্তার জানান, খাদিজার মাধ্যমে তিনি প্রতি মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ১২ বছরের জন্য ডিপিএস করেন। কিন্তু তাঁকে প্রতি মাসে ২ হাজার ৩০০ টাকা জমা করার রসিদ দেওয়া হয়। রসিদে না থাকা বাকি টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তা মেয়াদপূর্তি শেষে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান খাদিজা। ২০২১ সালে মেয়াদ শেষে অফিসে কাগজপত্র জমা দেন।

এরপর থেকে খাদিজার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের পাশাপাশি অফিসে শতাধিকবার ধরনা দিয়েও প্রাপ্য টাকার চেক মেলেনি। কবে নাগাদ দেওয়া হবে, তা-ও বলতে নারাজ দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

মনোয়ারা নামের একজন বলেন, তিনি ১২ বছরের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। সেই সঙ্গে করেছিলেন প্রতি মাসে ৫০০ টাকার ডিপিএসও। তাঁর দুটোর মেয়াদ তিন বছর আগে পূর্ণ হয়েছে। কাগজপত্র জমা দেওয়ার তিন বছর পার হলেও এখনো তাঁর টাকার কোনো সুরাহা হয়নি।

মনোয়ারা বেগম ও নিরুয়া বেগম জানান, ইনস্যুরেন্স সম্পর্কে কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা নেই তাঁদের। তাঁদের গ্রাহক সংগ্রহ ও টাকা উত্তোলনের কাজ করতে খাদিজা চাকরি দিয়েছিলেন। তাঁরা খাদিজার পরামর্শে নতুন গ্রাহককে বুঝিয়ে ইনস্যুরেন্স করানোর পাশাপাশি প্রতি মাসের টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলে খাদিজার হাতে এনে জমা দিতেন।

বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির জানান, মেয়াদপূর্তির পর টাকা না পাওয়া শতাধিক বিক্ষুব্ধ গ্রাহক ইনস্যুরেন্স কর্মকর্তা খাদিজাকে অবরুদ্ধ করেন। তিনি বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপর তিনি ভুক্তভোগী বেশ কিছু গ্রাহককে নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংস্থাটির সীতাকুণ্ড শাখা অফিসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তাকে পাননি। শেষে অফিস ইনচার্জের সঙ্গে কথা বললে গ্রাহক কবে নাগাদ টাকা পাবেন, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

শতাধিক গ্রাহকের টাকা না পাওয়ার বিষয়টি সত্য জানিয়ে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্সের সহকারী ম্যানেজার খাদিজা বলেন, ‘কর্মীদের গাফিলতির কারণে মেয়াদপূর্তির পরও সঠিক সময়ে কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি তাঁরা। তবে সময়ক্ষেপণ করে জমা দিলেও প্রতিষ্ঠানের অর্থসংকটের কারণে গ্রাহকের সঞ্চিত টাকার চেক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জুলাই মাসে এসব গ্রাহকের চেক দেওয়া হবে বলে হেড অফিস থেকে জানানো হয়েছে।’

সীতাকুণ্ড শাখা অফিসের ইনচার্জ নুর উদ্দিন বলেন, ডিপিএস, মেয়াদি বিমাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা রাখা প্রায় এক হাজার গ্রাহকের মেয়াদ পূর্তি হয়েছে। এসব গ্রাহক ১ কোটি টাকা পাবেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের অর্থসংকটের কারণে তাঁরা এ মুহূর্তে টাকা ছাড় করতে পারছেন না। জুলাই মাসে সারা দেশে সংস্থাটির যত অফিস রয়েছে, সেসব অফিসের জন্য ২ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হবে। সেই হিসাবে তাঁরা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পাবেন। সেই টাকা দিয়ে তাঁদের কিছুই হবে না। তবে সময়ক্ষেপণ হলেও পর্যায়ক্রমে সবাই টাকা পাবেন বলে দাবি করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় যে কারণে চীনের সঙ্গে পেরে উঠছে না ভারত

মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ঢাকা: এনসিপি নেতা-কর্মীদের গলা ধাক্কা

সারা জীবন ‘একজনের কাছে কৃতজ্ঞ’ থাকবেন তামিম, কে তিনি

বিমসটেকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের চেষ্টায় মিয়ানমার: রয়টার্স

সচিবালয়ে কর্মরতদের রেশন দেবে সরকার, ক্ষুব্ধ বাইরে কর্মরতরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত