সাধারণ কয়েদি বেশে কনডেমড সেলে প্রদীপ ও লিয়াকত

কক্সবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯: ১৭
Thumbnail image

এত দিন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কক্সবাজার জেলা কারাগারে ডিভিশনের বাসিন্দা ছিলেন একসময়ের প্রতাপশালী টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। গতকাল সোমবার থেকে তাঁরা ফাঁসির আসামি হিসেবে কারাগারের কনডেমড সেলে স্থানান্তরিত হয়েছেন। 

বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালত। আদালত এদিন বিকেলে ১৫ আসামির মধ্যে আরও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অন্য সাত আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। 

কক্সবাজার জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. নেছার আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে আদালত থেকে কারাগারে আনার পর নিয়মানুযায়ী আলাদা কনডেমড সেলে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে দুজনের ডিভিশনও বাতিল করা হয়েছে। তাঁরা এখন সাধারণ কয়েদি। 

জেল সুপার বলেন, দুজনই সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। সময়মতো খাবার খেয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে বাইরের কারও দেখা বা কথা হয়নি। চুপচাপ রয়েছেন। 

কারাগার সূত্র জানায়, বিধি অনুযায়ী সোমবার থেকে প্রদীপ ও লিয়াকতকে কারাগারের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত বা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কনডেমড সেলেই তাঁরা থাকবেন। 

রায় ঘোষণার দিন প্রদীপ ও লিয়াকত : গতকাল বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে জেলা কারগার থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় আদালতে তোলার সময় প্রদীপ ও লিয়াকত খুব শান্ত ছিলেন। বিচারক রায় পড়ে শোনানোর সময়ও তাঁরা একেবারে চুপচাপ ছিলেন। গতকাল বিকেল ৫টার সময় কারাগারে ফেরত নেওয়ার সময়ও নির্বিকার ছিলেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামি। তাঁদের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় বাইরে থাকা উৎসুক জনতা ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা ‘খুনি’ ‘খুনি’ বলে নানাভাবে গালাগাল করেন। 

প্রিজন ভ্যানে ওঠার পর প্রদীপ ও লিয়াকত কিছুটা উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন। এ সময় তাঁদের উদ্দেশে ঢিল ছুড়ে মারেন উপস্থিত লোকজন। এ সময় ঢিল ছোড়ার দায়ে এক যুবককে আটকও করে পুলিশ। 

এদিকে মামলায় খালাসপ্রাপ্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপপরিদর্শক শাহজাহান আলী, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ, থানা-পুলিশের কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, লিটন মিয়া ও আব্দুল্লাহ আল মামুন জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। 

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। 

মামলাটি তদন্তের পর র‍্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর দীর্ঘ শুনানি, জেরা ও যুক্তিতর্কের পর গতকাল কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত