লাইসেন্স স্থগিত হওয়া শেভরন ডায়াগনস্টিকের কার্যক্রম চালুর অভিযোগ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ২২: ৩২

অনিয়মের কারণে চট্টগ্রামে শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স স্থগিত হলেও কার্যক্রম চালু রাখার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে গত ২০ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স স্থগিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

তদন্ত ও অনুসন্ধান চালিয়ে শেভরনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণ পায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস। পরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াস চৌধুরী বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স স্থগিতের চিঠিটি শেভরন কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শেভরনের লাইসেন্স স্থগিত করা হলেও তারা কার্যক্রম চালাতে পারবেন। কারণ, সেখানে অনেক বড় বড় চিকিৎসক রোগী দেখেন। তাদের অনিয়মগুলো সমাধান করলে বা প্রমাণ দিতে পারলে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হবে।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাধারণত লাইসেন্স স্থগিত মানে কার্যক্রম বন্ধ থাকা। এরপরও খোলা রাখা মানে, তাদের হাত অনেক লম্বা। সিভিল সার্জনও তাদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না।’ 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত মানে প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই কার্যক্রম চালাতে পারবে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া।’ 

প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পাওয়া অনিয়মগুলো হলো: 

শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ডা. এ এম গোলাম মর্তুজা নামে এক ব্যক্তির নামে লাইসেন্স করা। তিনি দুই বছর আগে মারা গেছেন। ২০২২–২৩ অর্থবছরে লাইসেন্স নবায়নের আবেদনে ওই ব্যক্তির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। 

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর সরকার ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিলেও প্রতিষ্ঠানটি সরকারের নির্দেশনা মানেনি। অতিরিক্ত ফি আদায় করার বিষয়টি হাতেনাতে প্রমাণ হয়। 

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমান উল্লাহকে ভুল রিপোর্ট দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় সিভিল সার্জনের চিঠিতে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, পেটব্যথা নিয়ে তিনি একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন চিকিৎসক পরীক্ষার করতে বলায়, শেভরনে পরীক্ষা করান ওই রোগী। রিপোর্টে তাঁর অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সমস্যা বলে জানানো হয়। অপারেশন করার আগে, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বাইরের দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে, রিপোর্টে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার কথা বলা হয়। চিকিৎসকেরা শেভরনের রিপোর্টে ভুল বলে উল্লেখ করেন। 

চট্টগ্রামের হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ মো. রেজাউল করিম মারা গেছেন আট বছর আগে। অথচ এখনো তাঁর নাম ব্যবহার করে হৃদ্‌রোগ সংক্রান্ত ইকো–কার্ডিয়োগ্রাফির রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ আছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোরও নোটিশ দেন সিভিল সার্জন। 

 এ বিষয়ে কথা বলতে শেভরনের মহাব্যবস্থাপক পুলক পারিয়ারের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এর আগে অনিয়মের বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও কারণ দর্শানোর উত্তর সিভিল সার্জন অফিসকে দিয়েছেন। এরপরও সিভিল সার্জন তাদের না জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত