বীজবিহীন পেয়ারার নতুন জাত উদ্ভাবন

প্রতিনিধি
Thumbnail image

কাপ্তাই (রাঙামাটি): বীজমুক্ত পেয়ারার নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। দীর্ঘ সাত বছরের গবেষণায় তারা এ সফলতা অর্জন করেছেন। নতুন জাতের এ পেয়ারার নাম দেওয়া হয়েছে বারি পেয়ারা-৪। গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা নতুন এ জাতের পেয়ারা উদ্ভাবন করেছেন।

পেয়ারার নতুন এই জাত সারা দেশে সম্প্রসারিত হলে পেয়ারা চাষে নতুন বিপ্লব আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি অমৌসুমি ফল হিসেবেও দেশের বাজারে সব সময় এ পেয়ারা থাকবে। ইতিমধ্যে নতুন জাতের এ পেয়ারা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

দেশে সারা বছরই কমবেশি পেয়ারা চাষ হলেও নতুন উদ্ভাবিত এই জাত মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। উদ্ভাবিত নতুন জাতের বারি পেয়ারা-৪-এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এতে কোনো বীজ থাকে না। দেখতে লম্বাটে এবং পুরো পেয়ারাই খাওয়ার উপযুক্ত।

রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন বলেন, বারি পেয়ারা-৪ সম্পূর্ণ বীজবিহীন। আকারে বড়, রোগ ও পোকামাকড় সহিষ্ণু এবং অমৌসুমি একটি ফল। কমবেশি সারা বছর ফলটি পাওয়া যাবে। তবে সর্বাধিক ফল আহরণ করা হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। উচ্চ ফলনশীল এ ফলটি খুবই সুস্বাদু। সেপ্টেম্বর মাসে যখন দেশে পেয়ারাসহ অন্য ফল তেমন পাওয়া যায় না, তখন এ ফলটি আহরণ শুরু হয়। নতুন উদ্ভাবিত জাতটি পার্বত্য এলাকাসহ সারা দেশে চাষের উপযোগী। তিনি বলেন, নাশপাতি এবং আপেলের বিকল্প হিসেবে এই ফল ব্যবহৃত হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে ।

উদ্ভাবিত এ পেয়ারা উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর ফল। সব রকমের মাটিতে এ পেয়ারা চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি থেকে ভারী এঁটেল মাটি যেখানে পানি নিষ্কাশনের বিশেষ সুবিধা রয়েছে, সেখানে এই পেয়ারা ভালো জন্মে।

দেশি পেয়ারায় সাধারণত জুন মাসে ফুল আসে এবং আগস্ট মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। তবে উদ্ভাবিত নতুন জাতটিতে জুন মাসে ফুল আসে এবং সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। ফলের আকার সাত দশমিক ১৪ থেকে ১০ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার হয়। ফলের গড় ওজন হয় ২৮৪ গ্রাম এবং টিএসএস শতকরা ৯ দশমিক ৫ ভাগ। ফলটি দেখতে সাধারণত মসৃণ হয়। পরিপক্ব অবস্থায় হলদে সবুজ এবং শাঁস সাদা হয়ে থাকে। ফলটি ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। বছরে হেক্টর প্রতি প্রায় ৩২ টন ফলন হয় এই পেয়ারায়। এই জাতের পেয়ারায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ তেমন পরিলক্ষিত হয় না। তবে ছাতরা পোকার আক্রমণ দেখা যায় মাঝে মধ্যে। আক্রমণের প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে ধ্বংস করতে হয়।

রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম বলেন, উদ্ভাবিত বারি পেয়ারা-৪ সম্পূর্ণ বীজমুক্ত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অনুমোদন পাওয়া এই ফল কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, আমি নিজে পেয়ারাটি খেয়েছি। এর মান খুব ভালো। তিনি বলেন, এটা সম্প্রসারণ এর যোগ্য। এর বীজ যদি কৃষি বিভাগকে প্রদান করা হয়, তাহলে পার্বত্যাঞ্চলে আমরা ছড়িয়ে দিতে পারব। মার্কেটে এর চাহিদা খুবই ভালো।

রাইখালীর কৃষক আবদুল কুদ্দুস জানান, পাহাড়ে অনেক রকম ফলের ফলন হলেও বীজহীন পেয়ারার কথা তারা এই প্রথম শুনলেন। পাহাড়ে চাষের উপযোগী এই ফল চাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে সারা বছরই এই পেয়ারা বাজারে বিক্রি করা যাবে। এই তথ্য তাদের বেশ আশাবাদী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত