আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি: টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। আজ বুধবার দুদকের করা মামলার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। 

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায়ে প্রদীপ কুমার দাশকে ৩টি ধারায় ২০ বছর কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণকে চারটি ধারায় ২১ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন। 

রায় ঘোষণার পর প্রিজনভ্যানে তোলার সময় প্রদীপ সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আমি দুর্নীতি করিনি। আমি দুর্নীতি করিনি। আমি নির্দোষ। আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত।’ তিনি বলেন, ‘সিনহা হত্যা মামলায় যে রায় দেওয়া হয়েছে, সেখানেও আমি নির্দোষ। আমি মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধ করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি, যাতে যুবসমাজ ধ্বংস না হয়। আপনারা টেকনাফে যান, অনুসন্ধান করে দেখেন।’ 

রায় ঘোষণা উপলক্ষে বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রদীপ ও চুমকিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার সময় তাঁরা দুজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টা ৭ মিনিটে বিচারক এজলাসে এসে রায় পড়া শুরু করেন। এ সময় দুজনই বেশ বিমর্ষ ছিলেন। পরে রায় ঘোষণার পর প্রদীপকে প্রিজনভ্যানে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চিৎকার করে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেন। তবে তাঁর স্ত্রীর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তিনি অনেকটা নির্ভার ছিলেন। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ কুমার দাশ ও তাঁর স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে তৎকালীন দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন মামলাটি করেন। দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই মামলায় গত ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গত ১৮ জুলাই আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। 

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ সম্পদ স্ত্রীর নামে স্থানান্তর করেও এসব সম্পদ রক্ষা করতে পারলেন না প্রদীপ। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, প্রদীপ একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। সেগুলো নিজের কাছে রাখতে স্ত্রী চুমকি কারণের নামে স্থানান্তর করেন। গৃহিণী হয়েও তাঁর স্ত্রী ভুয়া মৎস্য চাষের হিসাব দেখিয়েছেন। এমনকি নিজের ঘুষের টাকায় তৈরি ছয়তলা বাড়িটি শ্বশুরের দান করা বলেও দাবি করেছেন প্রদীপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির এসব সম্পদ রক্ষা করতে পারলেন না তিনি। তাঁর এসব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’ 

মাহমুদুল হক বলেন, বাজেয়াপ্ত সম্পদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৮৩ (৯) এবং ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা ৫১৭ / ৫২০ সহ প্রযোজ্য অন্যান্য বিধানের আলোকে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় থাকা সম্পত্তির বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে কক্সবাজার জেলার সম্পত্তির বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত