চট্টগ্রামে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীসহ আ.লীগের ১৫০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ১১
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ৪২

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে গুলিবর্ষণ, মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ আওয়ামী লীগের সাড়ে ৩০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। 

গতকাল শুক্রবার নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন মঈন উদ্দীন রাজীব নামে এক যুবদল নেতা। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়েদুল হক মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার সময় নেতা-কর্মীদের মারধর ও জখমের ঘটনায় যুবদলের এক নেতা বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।’ 

তিনি বলেন, মামলায় আসামিদের মধ্যে আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত আরও সাবেক চার সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান ২১ জন কাউন্সিলর ছাড়াও দলটির শীর্ষ পদধারী নেতারা রয়েছেন। 

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ৪ আগস্ট বাদী দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দেন। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মামলায় উল্লিখিত ১ থেকে ২০ নম্বর আসামিদের নির্দেশে বাকি আসামিরা লাঠি, ইট-পাথর, লোহার ও আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, মারধর ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে। 

এ সময় বাদীসহ তাঁর দলের অনেকেই শরীরে গুরুতর জখম হন। পরে সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাদী উল্লেখ করেন, বর্তমানে তাঁদের দুই কর্মী গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

আসামিরা হলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক এমপি এম এ লতিফ, জানে আলম দোভাষ, মহিউদ্দিন বাচ্চু, এম এ সালাম ও দিদারুল আলম দিদার। 

কাউন্সিলররা হলেন চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, আব্দুর সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন, মো. জাবেদ, নাজমুল হক ডিউক, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, মো. ইলিয়াছ, মো. মোরশেদ আলী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগির, জহুর লাল হাজারী, নুর মোস্তফা টিনু, শৈবাল দাশ সুমন, আবু হাসনাত বেলাল, জিয়াউল হক সুমন, কবির আহমদ মানিক, বিজয় কুমার কৃষাণ, এইচ এম সোহেল, জহুরুল আলম জসিম, আব্দুল কাদের ও নজরুল ইসলাম বাহাদুর। 

আওয়ামী লীগ নেতারা হলেন ওমর গণি এমইএস কলেজের সাবেক ভিপি আরশেদুল আলম বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম, যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক সাইফুল আলম লিমন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, সহসভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল আলম চৌধুরী নোবেল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সাজিদ দাশ, ইসলামিয়া কলেজের সাবেক ভিপি খলিলুর রহমান নাহিদ প্রমুখ।

তথ্যমতে, ঘটনার দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা নগরীর নিউমার্কেট চত্বরে অবস্থান নেওয়া শুরু করে। একই জায়গায় আওয়ামী লীগও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। 

বেলা ১১টায় পুলিশ সাঁজোয়া যানসহ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে নিউমার্কেটে অবস্থান নেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের দমাতে গুলি, ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক একে-২২ অস্ত্রও ব্যবহার করতে দেখা গেছে সরকারি দলের ক্যাডারদের। 

এরপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট মোড় থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে বিআরটিসি, আমতল, টাইগারপাস মোড় ও ওয়াসা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সেখানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে নিউমার্কেট মোড় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দখলে নেন। বিকেল নাগাদ পুনরায় নিউমার্কেট মোড় দখল করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাঁদের ঘিরে নিরাপত্তা দিয়েছিল সেনাবাহিনী। পরদিন সরকার পদত্যাগ করে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত