Ajker Patrika

সর্বনিম্ন দরদাতাকে দেওয়া হয় না কাজ

  • সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারকে কালোতালিকাভুক্ত করার অভিযোগ
  • নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইমরান হোসেনকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক ,চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উন্নয়নকাজের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ দিতে উপেক্ষা করা হয়েছে সরকারি ক্রয় নীতিমালা। টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতাকে এড়িয়ে কাজ দেওয়া হয়েছে অন্যদের। এ বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ মার্চ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ করায় বন্দরের ইলেকট্রিক্যাল শাখা সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কালোতালিকাভুক্ত করেছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল-২-এ হাই মাস্ট ও এলইডি লাইট স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে সর্বনিম্ন দুই দরদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সওয়েল ইন্টারন্যাশনাল এবং এএম ইঞ্জিনিয়ারিংকে উপেক্ষা করে কাজ দেওয়া হয় এঅ্যান্ডজে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠানটি ৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার দরপ্রস্তাব করেছিল, যা প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়ে ১ কোটি ১২ লাখ এবং দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়ে ৪১ লাখ টাকা বেশি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘সর্বনিম্ন দরদাতা হলেই কাজ পাবেন না। তার সক্ষমতা আছে কি না—টেন্ডার কমিটির বিবেচনার বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এঅ্যান্ডজে ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগের দুই কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণেই বেশি দর আহ্বান করেও কাজ পাওয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

দরপত্রে অংশগ্রহণকারী এএম ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে সব দরদাতার কাগজপত্র (ভেরিফিকেশন) যাচাই করার আহ্বান জানায়। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে জাল কাগজপত্র জমা দিয়েছে বলে ওই চিঠিতে বলা হয়। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের ইলেকট্রিক্যাল শাখা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ঠিকাদারকে নিয়মবহির্ভূতভাবে দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা (কালোতালিকাভুক্ত) করে। বিষয়টি নিয়ে ১৮ মার্চ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইমরান হোসেনকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি করা হয়। আগামী ৭ এপ্রিল এ বিষয়ে শুনানির কথা রয়েছে।

এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের তৈরি দুটি কার্গো লিফট কিনেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। যার দাম ছিল সর্বনিম্ন দরদাতার প্রস্তাবিত মূল্যের দ্বিগুণ। ওই সময় সর্বনিম্ন দরদাতা ১ কোটি ১৩ লাখ টাকায় লিফট সরবরাহের প্রস্তাব দিলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ পঞ্চম দরদাতাকে কাজ দেয়। যার দর ছিল ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বন্দরে ৭২টি বড় আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। যাতে টাকার অঙ্কে অনিয়মের পরিমাণ ১ হাজার ৩১৪ কোটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল-২-এ হাই মাস্ট লাইট স্থাপন প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটিকে ‘প্রযুক্তিগতভাবে যোগ্য’ এবং দুটিকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ন্যূনতম ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ করেনি উল্লেখ করে প্রথম (সর্বনিম্ন দরদাতা) প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় ‘সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার অভাব’-এর কথা উল্লেখ করে, যদিও প্রতিষ্ঠানটির অভিজ্ঞতা ছিল। চতুর্থ প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য ঘোষণা করা হয়, যদিও তাদের অভিজ্ঞতা নথিতে অসংগতি ছিল।

এ বিষয়ে এএম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. শফি আলম বলেন, ‘আমরা ২৬ বছর ধরে কাজ করছি। কিন্তু বন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আঁতাতের কারণে টেন্ডারপ্রক্রিয়া প্রভাবিত হচ্ছে। যাদের অভিজ্ঞতা নেই, তাদের ‘প্রযুক্তিগতভাবে যোগ্য’ ঘোষণা করা হয়, আর যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় শুধু নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে সুবিধা দিতে।’

সাউথ এশিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের মালিক এনামুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘২০২০ সালের পর থেকে একটি টেন্ডারও পাইনি, এমনকি সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও। চার ব্যক্তি ও বন্দরের দুই কর্মকর্তা এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। তাঁরা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বাইরের কাউকে কাজ দেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত