লোডশেডিংয়ে ব্যাহত চা উৎপাদন, গুণমান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ১৪: ৫৬
আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩, ১৫: ৫৫

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার চা-বাগানগুলোর চা উৎপাদনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বাগানগুলোতে উত্তোলিত চা-পাতা পচে নষ্ট হচ্ছে। আবার অনেক বাগানে চা-পাতা চয়ন বন্ধ হতে চলেছে। 

বাগানসংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো কোনো দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। আবার কোনো দিন বিদ্যুৎ থাকেই না। এতে চা উৎপাদন ও বাগানে চয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে চা-পাতার গুণগত মান। এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছরে অনেক চা-বাগানেই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করেছেন তাঁরা। 

উপজেলার উদালিয়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ১ জুন থেকে ৫ জুন পর্যন্ত এই চা-বাগানে মোট ৭০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। দিনের হিসাবে তা দাঁড়ায় দুই দিন। এখন চা-পাতা চয়নের মৌসুম হলেও বিদ্যুতের সংকটে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় বাগানের সার্বিক কার্যক্রম জেনারেটরের মাধ্যমে পূরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

কৈয়াছড়া চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এবার চায়ের উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত করা যাচ্ছে না। 

এই ব্যবস্থাপক আরও বলেন, দিনে সাত-আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থালেও বৈদ্যুতিক জেনারেটরগুলো রক্ষা করা যেত। কিন্তু এখন ১০-১৫ মিনিট চলে আবার বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। এতে জেনারেটরগুলো ক্রমশ নষ্ট হতে চলেছে। 

উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আবদুস সালাম বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা ৩৫ মেগাওয়াট। কিন্তু এর বিপরীতে পাওয়া যায় ১০-১২ মেগাওয়াট। তাই যথাযথ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া জাতীয়ভাবে বিদ্যুতের হাহাকার চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। 

বারমাসিয়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মিলন জানান, চা-পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় এবার তাদের বাগানের প্রায় ২ হাজার কেজি কাঁচা চা-পাতা নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর নষ্ট হয়েছে, যা মেরামতে ব্যয় হয়েছে ২ লক্ষাধিক টাকা। এ অবস্থায় বাগানের চা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। 

রাঙ্গাপানি চা-বাগানের ব্যবস্থাপক উৎপল বিশ্বাস বলেন, সকাল ৮টায় বিদ্যুৎ গেলে দুপুর গড়িয়ে গেলেও আসে না। এ অবস্থায় চা-শ্রমিক, প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় এবং উৎপাদন খরচ বাড়ার ফলে চা-শিল্পের বিকাশে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে। 

চা-শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখে। গত অর্থবছরে উপজেলায় উৎপাদিত চা জাতীয়ভাবে ১০ শতাংশের জোগান দেয়। কিন্তু এখানকার ১৮টি চা-বাগানের জন্য যে বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়া হয় তা কাম্য নয়। এতে চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ছে বলে মন্তব্য করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাব্বির রাহমান সানি। 

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সরওয়ার জাহান বলেন, জাতীয়ভাবে বিদ্যুতের সমস্যা চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। দেশে কয়লা এসে পৌঁছালে শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত