‘মুক্তিপণের জন্য’ গৃহশিক্ষকের হাতে নিহত ৮ বছরের শিশু

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ১৮: ২৪
Thumbnail image

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আট বছর বয়সী শিশু আদিল হত্যার সঙ্গে জড়িত এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া কিশোরের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে শিশু আদিলের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং মাটিতে পুঁতে রাখে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ।

নিহত শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহান ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, ‘শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহান ১৫ মে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ থেকে বাড়িতে না ফেরায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে পরিবারের লোকজন। খুঁজে না পেয়ে পরদিন ১৬ মে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি করে পরিবার। এ ঘটনায় পুলিশের তদন্তকাজ চলছিল। পরে ১৯ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে নিখোঁজ শিশুর বাড়ির পাশে জনৈক আবদুল মতিনের জমি থেকে আদিলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।’

এসপি মিলন মাহমুদ বলেন, ‘এ ঘটনায় ওই দিনই শিশুর বাবা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ধারণা করে, যে সময়ের মধ্যে শিশু আদিল নিখোঁজ হয়, তা খুবই কম সময়। খুব কাছের লোকের মাধ্যমে এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। পরে পুলিশ তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং নিহত শিশুর গৃহশিক্ষককে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে।’

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতের বরাত দিয়ে এসপি মিলন মাহমুদ বলেন, ‘সে নিয়মিত ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখে। সেই আলোকে ঘটনার দিন মাগরিবের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মসজিদ এলাকা থেকে আদিলকে বাড়ির পাশের নির্জন নার্সারিতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আদিলের মুখ ও গলা চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। ওই সময় ওই কিশোর তার মায়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে শিশু আদিলের মায়ের কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কল দেয়। কিন্তু আদিলের মা তার সন্তানকে খুঁজতে গিয়ে মোবাইল ফোন ঘরে রেখে যান। যে কারণে ফোন রিসিভ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সেও আদিলের পরিবারের সঙ্গে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। রাত ১২টার দিকে সবাই ঘরে চলে গেলে গ্রেপ্তারকৃত কিশোর ঘটনাস্থলে আদিলকে দেখতে যায়, গিয়ে দেখে আদিল আর জীবিত নেই। এরপর সে রাত ১টার দিকে প্রতিবেশী রেনু বেগমের রান্না ঘর থেকে দা ও কোদাল এনে মাটি খুঁড়ে জনৈক আবদুল মতিনের গরুর জন্য চাষকৃত জমিতে আদিলের মরদেহ পুঁতে রাখে। এরপর দা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ওই রান্না ঘরে রেখে দেয় এবং তার মায়ের ব্যবহৃত সিম কার্ড বাচ্চু মিয়ার পুকুরে ফেলে দেয়।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ আরও বলেন, ‘অপরাধীর বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। সে একই এলাকার বাসিন্দা। এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তার পরিবারে আর্থিক সংকট আছে। আদিলের গৃহশিক্ষক হওয়ার কারণে সে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিল। সে জানত আদিলের ঘরে কিছু টাকা আছে। যে কারণে সে এই পরিকল্পনা করে। সিরিয়ালে দেখেছে ৪০ সেকেন্ড মুখ চেপে ধরলে মারা যায় না এবং অজ্ঞান হয়ে থাকে। কিন্তু তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি বরং শিশুটির মৃত্যু হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত