Ajker Patrika

ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ হাসপাতালে রেখে পালাল শ্বশুরবাড়ির লোকজন, স্ত্রী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক ,চট্টগ্রাম
অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম নগরের আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কদমতলী শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ জাফর আলী চৌধুরীর। ছবি: সংগৃহীত
অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম নগরের আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কদমতলী শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ জাফর আলী চৌধুরীর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জামাতার লাশ হাসপাতালে রেখে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারের করা হত্যা মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে রোমানা ইসলাম নামের ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা-পুলিশ।

এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে জাফর আলী চৌধুরী (৪৩) নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার উত্তর ইদিলপুর এলাকার জানে আলম চৌধুরীর ছেলে। নগরের আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কদমতলী শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী রোমানা নগরের কোতোয়ালি থানার জেলরোড এলাকার মো. ফয়জুল ইসলামের মেয়ে। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে।

পুলিশ জানায়, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের একটি ভবনের ফ্ল্যাট থেকে জাফর আলীকে উদ্ধারের পর তাঁকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওনার স্ত্রী আমাদের জানিয়েছিল তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। পরে তাঁর স্বামী ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আবার ওই সময় দরজাও খোলা ছিল।’

তবে ওসি বলেন, অন্যদিকে লাশের সুরতহাল রিপোর্টে ওনার ঘাড় ও হাতে নখের আঁচড়, কানে জমাটবাঁধা রক্ত এবং মাথার পেছনে ফোলা জখম দেখা গেছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারও দাবি করছে, তাঁকে খুন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আগে থেকে পারিবারিক কলহ ছিল।

পরে নিহত জাফরের ভাই আবুল হাসনাত বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী রোমানাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ওসি বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুর বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার ওই ব্যাংক কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যুর পর আজ দুপুরে চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। ওই মামলায় পুলিশ রোমানা ইসলামকে নগরের চান্দগাঁও বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, জাফর আলী চৌধুরী তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন। সংসারের বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে রোমানা ইসলাম স্বামী জাফরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। জাফরের শ্বশুরও তাঁকে বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত ও ‘নিশ্চিহ্ন’ করার হুমকি দেন। জাফর তাঁর ছোট ভাইকে বেঁচে থাকতে জানিয়েছিলেন, শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পর তাকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। জাফরের দুই শ্যালক শরীফুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম বিভিন্ন সময় তাঁকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দিতেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ২২ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রোমানা ইসলাম তাঁর ননদ রোকেয়াকে ফোন করে বলেন, জাফর অসুস্থ এবং তাঁর কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। এরপর তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। পরে তাঁর পরিবারের লোকজন চমেক হাসপাতালে জাফরের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় সেখান থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে যান।

আবুল হাসনাত বলেন, ‘আমার ভাইকে বিভিন্নভাবে ওরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। হত্যা না করলে পুলিশকে ফোন না করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আমার ভাইয়ের লাশ ফেলে পালাল কেন তারা? আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত