নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে এখনো আতঙ্ক, আজও পাঠদান চলে ৭ বিদ্যালয়ে

নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩: ৩৯
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৩৭

মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাসিন্দারা এখনো আতঙ্কে রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে গোলাগুলি কমলেও দুপুরে বাড়ে। সন্ধ্যায় গোলাগুলি আরও বাড়ে। এদিকে একদিন বন্ধ থাকার পর উপজেলার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ পাঠদান চলেছে। 

পাঠদান চলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইশফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় ও ঘুমধুম মিশকাতুন্নবী দাখিল মাদ্রাসা। 

পাঠদান চলার বিষয় আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা। তিনি বলেন, ‘গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত বন্ধ থাকে ৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব বিদ্যালয়ে আজ সকালে পাঠদান চালু হয়। চলে সারা দিন।’ 

সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন শিক্ষক জানান, আজ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। সকালে স্কুল চলার সময়ে গোলাগুলির শব্দ তেমন শুনতে পাননি তাঁরা। তবে দুপুর থেকে সন্ধ্যার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে তুমুল সংঘর্ষ ও মর্টার শেলের শব্দে কাঁপে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম, ভাজাবুনিয়া ও আশপাশের গ্রাম। 

তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল সোমবার দুপুরের আগে স্কুলের ক্লাস বন্ধ ছিল। আজ সকালে যথারীতি খুলেছে। তবে উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও ক্লাস যথারীতি হয়েছে।’ 

বাইশফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহ জালাল বলেন, ‘ভয়ে ভয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। গতকাল স্কুল ১২টার দিকে বন্ধ দিয়ে দ্রুত স্কুল ত্যাগ করি আমরা। আজ স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৬০ শতাংশ। পরিস্থিতি থমথমে।’ 

ভাজাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ছৈয়দ হোছাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তুমব্রু এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। গতকালের ভয় এখনো রয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। আজ শিক্ষার্থীর উপস্থিত কম ছিলে।’ 

এদিকে গতকাল সকালে তুমব্রু পশ্চিমকুল গ্রামের একটি বাড়িতে মর্টার  শেল পড়ে। এ সময় উপস্থিত ছিল বাড়ির সদস্য মাইমুনা আক্তার। সে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা বাহাদুর উল্লাহ বলেন, ‘গতকাল বাড়ির বারান্দায় ছিলেন মাইমুনা ও তার মা হাসিনা বেগম। তখন সকাল সাড়ে ১০ টা। তাঁদের ১২ হাত দূরে একটি মর্টার শেল এসে পড়ে। ভয়ে কাতর হয়ে পড়ে সে ও তাঁর মা। এরপর থেকে তুমব্রু গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত।’ 

তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের পাশের বাসিন্দা ফরিদুল আলম, স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আবদুচ্ছালাম, শিক্ষক ছৈয়দুল রহমান হীরা ও ভাজাবুনিয়া গ্রামের আবদুর রশিদসহ সীমান্তের বিভিন্ন বাসিন্দা বলেন, আজ সকালে গোলাগুলি কম হলেও সন্ধ্যার পর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। তুমব্রুর ওপারে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের সেনা বনাম কোনার পাড়ার ওপারে মিয়ানমারের মাইক পোস্টে থাকা আরাকান আর্মির মধ্যে। বর্তমানে এই ক্যাম্পটি উভয় পক্ষ দখল করতে চায় বলে জানান কয়েকজন রোহিঙ্গা। 

এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুমসহ সীমান্তের এই এলাকায় মিয়ানমারের সেনা ও বিভিন্ন বিদ্রোহী বাহিনীর গোলাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিন এসে জানতে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন আগামীকাল বুধবার সকালে তুমব্রু পয়েন্টে যাবেন। তারা ভাজাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে যাবেন। এসব বিষয় জানান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া। 

দুই বছর ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩১ সীমান্ত পিলার থেকে ৫৬ নম্বর পিলার পর্যন্ত দীর্ঘ সীমান্তের ৭৫ কিলোমিটার এলাকার ২৪টি সীমান্ত চৌকির ২০ ক্যাম্প সেদেশের সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এএ) সশস্ত্র গোষ্ঠী দখল করে নেয়। যার সর্বশেষ দখল হলো তুমব্রু কোনারপাড়া জিরো লাইনের সাবেক রোহিঙ্গা শিবির সংলগ্ন মাইক পোস্টের উঁচু পাহাড়ে পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্প। এই ক্যাম্প দখলে নিতে গতকাল আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে তুমুল গোলাগুলি হয়। এই সংঘর্ষের আগের দিন মাইক পোস্টের সেনা ক্যাম্প বিদ্রোহীরা দখলে নিয়েছিল। যা গতকাল সকালে আরাকান আর্মি কেড়ে নেয় এবং বিদ্রোহীরা পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত