নোয়াখালীতে গুলিতে রক্তাক্ত ইউপি সদস্যর ভিডিও ভাইরাল

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ২১: ৫৩

নোয়াখালীর সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. দুলাল মেম্বার (৪৭) গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর করা ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ভিডিও এবং ভিডিওটিতে দেওয়া দুলালের দেওয়া তথ্য নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। 

আজ বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি দুলাল মেম্বার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরের বলে নিশ্চিত করেছেন তাঁর বড় ছেলে আবদুল আজিজ। তিনি আরও জানান, এ সংক্রান্ত আরও কিছু ভিডিও আছে। 

৪১ সেকেন্ডর ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আহত হয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন দুলাল মেম্বার। কারা গুলি করেছে সে বিষয়ে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানতে চেয়ে ভিডিওটি করেছেন বলে বোঝা যাচ্ছে। ভিডিওতে দুলাল মেম্বারকে বলতে শোনা গেছে, ‘একগা সুমিন্যা’। পাশে থাকা লোকদের মধ্যে একজন জানতে চেয়ে বলেন, ‘সুমন ইগা কে? কার লগে চলাফেরা করে?’। 

জবাবে দুলাল মেম্বার বলেন, ‘চেয়ারম্যানের লোক।’ পাশে থাকা ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন ‘বর্তমানে জসিম চেয়ারম্যানের লগে রানিং চলাফেরা করে?। মেম্বার বলেন, ‘জসিম চেয়ারম্যানের লোক। আরেকগা অইছে ইউছুফিয়ার ভাই ফারুক মাঝির...।’ পাশে থাকা ব্যক্তি জানতে চান ‘ফিরোইজ্যা?’ দুলাল মেম্বার বলে ‘ফিরোইজ্যা ইগার নাম, আরেকগা অইলো নুর হুসুইন্নার হোলা সবুইজ্জা।’ তখন একজন জানতে চায়, ‘আন্নে এই তিনুগারে দেখছেন?।’ দুলাল মেম্বার বলে ‘আর গুনরে চিনি ন।’ 

জানতে চাইলে আন্ডারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভিডিওটি আমার নজরে এসেছে। আমি যেহেতু এ ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সেহেতু পুরো আন্ডারচর ইউনিয়নের ৪০ হাজার লোকই আমার। এখানে আমার লোক বলে যে সুমনের নাম এসেছে, সে আসলে ওই অর্থে আমার লোক না। সে আমার এলাকার বাসিন্দা এবং সে গত নির্বাচনে আমার পক্ষে ভোট করেছিল। যেহেতু মেম্বারের বক্তব্যে সুমনের নাম এসেছে তাই প্রশাসনসহ আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ একজন সুমন আমার লোক বলে দুলাল মেম্বারের মুখে স্বীকার করাচ্ছে। গত নির্বাচনে যারা আমার প্রতিপক্ষ ছিল তারা পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব করাচ্ছে।’ 

ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে সুধারাম মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নজরেও এসেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যে দুলাল মেম্বার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় সবুজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার নাম ওই ভিডিওতে দুলাল মেম্বার বলেছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত সবুজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকা স্বীকার করে আদালতে ১৪৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সরাসরি এবং এর পেছনে যারা রয়েছেন আমরা তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। 

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের বাড়িতে জায়গা-জমি নিয়ে একটি সালিশি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন দুলাল মেম্বার, হাসান ও তাদের মোটরসাইকেল চালক। তাদের মোটরসাইকেলটি আন্ডারচর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলা বাজার এলাকার মোড়ে পৌঁছালে প্রথমে কয়েকজন দুর্বৃত্ত চলন্ত মোটরসাইকেলে হামলা চালিয়ে তিনজনকে সড়কের ওপর ফেলে দেয়। 

পরে হামলাকারীরা দুলাল মেম্বারকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ সময় মোটরসাইকেলের নিচে পড়ে হাসান আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন পিঠে ও হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুলাল মেম্বারকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ও অবস্থার অবনতি হলে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার রাত ১১টার দিকে মারা যান তিনি। আজ বুধবার সকালে নিহত দুলাল মেম্বারের মৃতদেহ তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত