পাহাড়ে খাবার সংকটে লোকালয়ে হাতি, আক্রমণে নারীসহ নিহত ২

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
Thumbnail image

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন নারীসহ দুজন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও এক নারী। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলা বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক আশ্রয়ণ প্রকল্পে হাতির আক্রমণে দিনমজুর মো. আবুল কাশেম দুলাল (৫৫)। রাত আড়াইটার দিকে বৈরাগ ইউনিয়নে খোসাল তালুকদারের বাড়িতে হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছেন রেহেনা আকতার (৪৮) নামে এক গৃহবধূ। এ সময় আহত হন রেহেনা আকতার দেবর গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী মারজানা আকতার (২৮)।

নিহত দুলাল বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর গুয়াপঞ্চক এলাকার শাহ্ আহমদ বাড়ির মৃত মুজিবুর রহমানের ছেলে এবং রেহেনা একই বৈরাগ খোসাল তালুকদারের বাড়ির মো. আকতার উদ্দিনের স্ত্রী। আহত মারজানা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘হাতির আক্রমণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক উপকারভোগীসহ এক নারী নিহত হয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।’

নিহত মো. আবুল কাশেম দুলালের স্ত্রী রওশন আরা বেগম (৪৫) বলেন, ‘তিনি ঘরে থেকে বের হয়েছিলেন মাত্র। উঠানে অবস্থান করা হাতিটি দৌড়ে এসে শুঁড়ে তুলে আছড়ে ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয় তাকে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত দিনমজুর দুলাল বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর গুয়াপঞ্চক শাহ আহমদ বাড়ির বাসিন্দা। নিজের কোনো জায়গা না থাকায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন। গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় হাতির আনাগোনা বেড়ে গেছে। খাবারের সন্ধানে আসা একপাল হাতি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আক্রমণ করে। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার কোনোমতে চলত তাঁর রোজগারেই। তাঁকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারটি।

অপর নিহত রেহেনা আকতারের দেবর মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘গভীর রাতে বাড়ির সামনের পাহাড় থেকে হাতিগুলো নেমে আসে। এতে মানুষ ঘুম থেকে উঠে আতঙ্কে পড়ে যান। আমাদের ঘরের সামনে চলে আসা হাতিগুলো আমার ভাবিদের ওপর আক্রমণ করে এতে ঘটনাস্থলে মারা যান বড়ভাবি এবং আহত হন ছোটভাবি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভাবির একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।’

2-elephantস্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেয়াং পাহাড় ঘেরা ওই এলাকায় আগে থেকেই বিচরণ ছিল বুনো হাতিদের। ২০১২-১৩ সাল থেকেই হাতির আনাগোনা বেশি দেখা দেয়। পাহাড়ে বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় লোকালয়ে আসা বেড়েছে হাতিদের। হাতির পালটি আনোয়ারার বটতলী হাজীগাঁও ও কর্ণফুলীর কেইপিজেডের দেয়াঙ পাহাড়, হ্রদ ও বন ঘেরা জায়গায় বিচরণ করে বেশি। তাদের হামলায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। সম্প্রতি নবনির্মিত টানেল রোড পারাপারের ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে সেই হাতির পাল। সোমবার গভীর রাতেও টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত অ্যাপ্রোচ রোডের পশ্চিম বৈরাগ অংশ পার হয় তিনটি হাতি।

স্থানীদের দাবি, ২০১৮ সালের শেষ দিকে ওই হাতির দলটি স্থায়ীভাবে কেইপিজেড এলাকায় বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাতির আক্রমণে ওই এলাকায় মানুষের প্রথম মৃত্যু হয়। শুরুতে এই দলে দুটি বড় এবং একটি ছোট হাতি ছিল। মাঝে মাঝে আরও একটি বড় আকারের হাতিকে এ দলের সঙ্গে দেখা যায়। স্থানীয়দের কাছে সেটি ‘লেজ কাটা’ হাতি নামে পরিচিত। এই হাতির দলের কারণে সব সময় আতঙ্কে থাকেন কর্ণফুলীর বড়উঠান ও আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চকের মানুষেরা।  গত বুধবার রাতেও কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের এক বৃদ্ধ হাতির আক্রমণে নিহত হন।

3-elephantস্থানীয় বৈরাগ ইউপি চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, কয়েক বছর ধরে কেইপিজেডে অবস্থান নেওয়া হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ পুরো আনোয়ারা-কর্ণফুলীবাসী। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল বৈরাগ, গুয়াপঞ্চক এবং বড়উঠানের দৌলতপুরে উপদ্রব বেশি। এক রাতে হাতির আক্রমণে নারীসহ দুজন প্রাণ মারা যাওয়া খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। প্রতিনিয়ত লোকালয়ে ঢুকে ঘরবাড়ি ভাঙচুর, ফসলি জমি নষ্টসহ হতাহতের ঘটনা ঘটলেও বন বিভাগ দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। শুধু ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায় সারছেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা মেজবাহ্ উদ্দিন খান বলেন, দিনের বেলা হাতিগুলো কেইপিজেডে অবস্থান আর লেকে ধারে ঘুরতে দেখা যায়। এ সময়ই অনেক দর্শনার্থীকে তাদের বিরক্ত করতে দেখা যায়। মূলত খাবার অভাবেই এরা লোকালয়ে আসে। অনেক সময় হাতিরা বিরক্ত হয়ে এবং নিজেদের রক্ষা করতেও মানুষের ওপর আক্রমণ করে। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। আর বনের হাতি বনে ফিরিয়ে নিতে বন বিভাগসহ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

4-elephantবন বিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ রেঞ্জের বন কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, পাহাড়, বন ও গাছ কেটে ফেলার কারণে হাতি লোকালয়ে চলে আসছে। হাতির বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি ও খাদ্য দরকার হয়। বর্ষাকালে পাহাড়ে পর্যাপ্ত পানি এবং গাছপালা থাকার কারণে ওই সময় হাতি পাহাড়ে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু শীতকালে যখন বৃষ্টিপাত হয় না, পাহাড়ে জমে থাকা পানি শুকিয়ে যায়, তখন পানি পান করার জন্য হাতিরা নিচে, সমতল ভূমিতে চলে আসে। তখনই মানুষের সঙ্গে হাতিদের সংঘর্ষ বাঁধে। স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে হবে এসব বিষয়ে। ক্ষতিগ্রস্তদের বন বিভাগ ক্ষতিপূরণসহ সহায়তা দিয়ে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত