চন্দ্রঘোনা নদীতে সেতু না থাকায় ৩০ সেকেন্ডের পথে সময় লাগে ৩০ মিনিট

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২১, ১০: ৫৯
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২১, ১৩: ৩৪

রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই এবং চট্টগ্রাম জেলার চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু না থাকায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই এলাকার লোকজন। ঘাটে যদি ফেরি পাওয়া যায় তাহলে পারাপরে লাগে ১০ মিনিট। আর যদি ফেরি অপর পাড়ে থাকে তাহলে সেখান থেকে এসে যাত্রী পারাপার করে। এতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি। যেখানে সেতু থাকলে পার হতে সময় লাগত মাত্র ৩০ সেকেন্ড। অনেক সময় ফেরিতে ওঠার পন্টুনে পানি উঠে যায়। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন ফেরিতে ওঠানামা করছে। ফলে অনেক সময় ছোট–বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

জানা যায়, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের জন্য ফেরি এখানকার প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়া কক্সবাজার ও টেকনাফের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কর্ণফুলী নদীর এ স্থানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পুরো রাস্তা লোকজন নিরাপদে যেতে-আসতে পারলেও সেতু পারাপারের জন্য ওই স্থানে এসে সবাইকে থমকে যেতে হচ্ছে।

ফেরির চালক ফারুক জানান, প্রতিদিন এই ফেরি দিয়ে ৫ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া অসংখ্য মানুষজন এ এলাকা দিয়ে নৌকা ও সাম্পানে করে যাতায়াত করছেন। সেতু না থাকায় সবাইকে কষ্ট করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে তিন গুণ-চার গুণ সময় ব্যয় হয়। 

কয়েকজন ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই নদীতে স্রোত বেড়ে যায়। ফলে ফেরিতে ওঠার পন্টুনে পানি উঠে যায়। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে ফেরিতে উঠতে হয়। এখানে যদি একটা সেতু নির্মাণ করা হয় তাহলে সব দুঃখ কষ্টের অবসান ঘটবে। 
 
রাঙামাটির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, গবেষণাকেন্দ্রের প্রয়োজনে প্রতিদিন ফেরি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অনেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ গবেষণা কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু ফেরির কারণে তাঁরা সহজে যাতায়াত করতে পারছে না। চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। 

কাপ্তাই কৃষি বিভাগের রাইখালী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাপ্পা মল্লিক বলেন, চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে সেতু না থাকায় রাইখালীতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য এবং মৌসুমি ফলমূল পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের। এর ফলে উৎপাদনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফেরি দিয়ে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশেরও বিপুলসংখ্যক যানবাহনও প্রতিদিন চলাচল করে। ফেরির কাছে এসে তারাও পারাপরের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকেন। 

রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তালুকদার জানান, এই ফেরির ওপর দিয়ে প্রায় প্রতি সপ্তাহে পার্বত্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, রাঙামাটি ২৯৯ আসনের সাংসদ দীপংকর তালুকদারসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও নিয়মিত যাতায়াত করেন। একইভাবে তাঁদেরও ফেরি পারাপারে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তারপরও কেন ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে সড়ক ও জনপদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরে একনেকের সভায় এখানে একটা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু কেন নির্মাণ করা হচ্ছে না তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত