Ajker Patrika

পাম্প বসিয়ে কৃষকের পানি নিয়ে যাচ্ছে হালদা ভ্যালি

  • এভাবে একতরফা পানি না তুলতে বাগান কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে পাউবো
  • চাষাবাদের পানি না পেয়ে স্থানীয় কৃষকেরা ক্ষুব্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও ফটিকছড়ি প্রতিনিধি
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসিয়ে অবৈধভাবে বারোমাসিয়া খালের পানি নিচ্ছে হালদা ভ্যালি চা-বাগান কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসিয়ে অবৈধভাবে বারোমাসিয়া খালের পানি নিচ্ছে হালদা ভ্যালি চা-বাগান কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বারোমাসিয়া খালের গতি পরিবর্তন করে অবৈধভাবে পানি উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে শিল্পপতি নাদের খানের মালিকানাধীন হালদা ভ্যালি চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসিয়ে একতরফা পানি উত্তোলন না করতে বাগান কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে বাগান কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি। এদিকে বারোমাসিয়া খালের পানি না পেয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকার কৃষকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রান্তিক কৃষকদের চাষাবাদের সুবিধার্থে ১৯৮০ সালে উপজেলার নারায়ণহাট ইদিলপুর এলাকায় একটি মাঝারি ধরনের স্লুইসগেট স্থাপন করে সরকার। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এটি ব্যবহার করে শত শত কৃষক তাঁদের চাহিদামতো বোরো চাষ করেন। কিন্তু প্রতিবছর বাগান কর্তৃপক্ষের কারণে এলাকার শত শত কৃষক চাহিদামতো পানি পান না।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইদিলপুর স্লুইসগেটের ওপরে বারোমাসিয়া খালের গতিপথ পরিবর্তন ও খালের বিভিন্ন স্থানে ছয়টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করছে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যায়, এমন কিছু বলা বা এখানে থাকা কোনোভাবেই কারও পক্ষে সম্ভব নয়। বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে সবাই জিম্মি।

স্থানীয় কৃষক মো. মুছা বলেন, ‘ধান রোপণের শুরুতে পানি পেলেও মাঝামাঝি সময়ে খালে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। হালদা ভ্যালি চা-বাগান খালের বেশির ভাগ পানি অবৈধভাবে উত্তোলন করে নেওয়ায় আমরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছি। ন্যায্য পানি না পেয়ে শত শত একর জমির চাষাবাদ নষ্ট হচ্ছে। এই মুহূর্তে পানির ব্যবস্থা না হলে কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে।’

স্থানীয় বাসিন্দা বাহার বলেন, ‘বাগানটি সব শেষ করে দিচ্ছে। তারা কারও কথা শোনে না। পাউবোর নোটিশও মানে না। এ অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

বারোমাসিয়া পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘এলাকার শত শত কৃষক পানির জন্য কষ্ট পাচ্ছেন—এটি ভাবতেই কষ্ট হয়। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষকে কিছু বলতে পারি না।’

এ বিষয়ে কথা বলতে হালদা ভ্যালি চা-বাগানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. মহসিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

পাউবো চট্টগ্রামের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সোহাগ তালুকদার বলেন, ‘বাগান কর্তৃপক্ষের এভাবে একতরফা পানি উত্তোলন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, এই নীতি সবার জানা দরকার। তাঁদের আমরা ১১ মার্চ তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছি। না মানলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘পাউবো তাদের নোটিশ দিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছে। আশা করব, বাগান কর্তৃপক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। এর ব্যত্যয় হলে দ্রুতই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত