মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প: কয়লা আমদানির অনিশ্চয়তায় উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩: ২৮

কয়লা আমদানির অনিশ্চয়তায় কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ১২০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের এই কেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রটিতে যে পরিমাণ কয়লা মজুত আছে তা দিয়ে দেড় মাসের মতো চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে প্রকল্পটিতে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেড়েছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যে কয়টা মেগা প্রকল্প নেওয়া হয় তার মধ্যে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি। এটি নির্মাণে দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। দুটি ইউনিটে মোট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুলাই মাসে উৎপাদনে এসেছে। বাকি ৬০০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি গত ডিসেম্বরে চালু হয়। কেন্দ্রগুলো কমিশনিং করার জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা। চুক্তি অনুযায়ী জাপানি প্রতিষ্ঠানটি আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কয়লার সর্বশেষ সরবরাহ দেয়। প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহ করা কয়লা থেকে বর্তমানে অবশিষ্ট আছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, যা দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা যাবে আর মাত্র এক দেড় মাসের মতো। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুমিতমোর সরবরাহ করা কয়লা শেষ হওয়ার আগেই নিয়ম অনুযায়ী কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কয়লা কেনার কথা থাকলেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে কয়লা ক্রয় আটকে যায়। 

তথ্য মতে, তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে সুবিধা দিতে ১০ মাস দেরি করেন। শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ তুলে কনসোর্টিয়াম অব বসুন্ধরা, ইকুইন্টিয়া ও অথ্রোর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাই মাসে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। 

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন) মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত না করা গেলে দুই মাস পর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। 

অপরদিকে এই বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ক্যাবলসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ৩১ আগস্ট একটি বার্জে করে পাচার করার সময় চারটি কনটেইনার ভর্তি ১৫ কোটি টাকার বৈদ্যুতিক তার জব্দ করেছে নৌবাহিনী। এ ঘটনায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ও এমডি আবুল কালাম আজাদ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

সম্প্রতি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ও এমডি আবুল কালাম আজাদ, প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান, প্রকল্পের সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিনসহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 

সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সীমানা প্রায় ৯ কিলোমিটারের মতো। নিরাপত্তা বাহিনী প্রকল্পটির নিরাপত্তা দেখভাল করছে। 

ক্যাবল পাচারের বিষয়ে সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিজানুল হাসান বলেন, কন্টেইনারের মাধ্যমে ক্যাবল নেওয়ার সময় গেট পাসের সঙ্গে ক্যাবলগুলোর ইনভয়েস ছিল না। 

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে যাত্রা করা মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৬ ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত