Ajker Patrika

চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়

পাহাড় কেটে আবাসন, নীরব দপ্তর

  • ভবন হবে ১৭ তলা। পরিকল্পনা পাস করেছে সিডিএ।
  • সিডিএ বলছে, পরিবেশ অধিদপ্তর উদ্যোগ নিতে পারে।
  • অধিদপ্তর বলছে, তারা মামলা করেছে। বিষয়টি আদালতে।
  • অর্ধেক পাহাড় কাটা হয়েছে, বাকিটা কাটার কাজ চলছে জোরেশোরে।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৮: ৫১
প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণকাজ। গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘিরপাড় এলাকায়। ছবি: হেলাল সিকদার
প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণকাজ। গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘিরপাড় এলাকায়। ছবি: হেলাল সিকদার

চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকার রিমা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে পাহাড়। সেখানে ৯২টি পরিবারের জন্য স্বপ্নীল ফ্যামিলি ওনার্স নামের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনটি আলাদা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। আর এটা করতে গিয়ে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এই কাজে বাধা দিলেও এখন তারা অজানা কারণে নীরব।

চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত আসকার দীঘির পাড়ের ওই পাহাড়ের ঢালের সর্বোচ্চ চূড়া ১২৭ ফুট উঁচু। কয়েকবার হাতবদল হয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী, খোকন ধর, হিমেল দাশ, সুভাষ নাথ, রনজিত কুমার দে, রূপক সেনগুপ্তসহ ৯২ জনের হাতে এসেছে এই জমির মালিকানা। দাম ১০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল সিডিএর ইমারত নির্মাণ কমিটির কাছ থেকে তিনটি বেজমেন্ট ও ১৪ তলা (পাহাড়ে বেজমেন্ট হয় না; বাস্তবে তিনটি পার্কিং ফ্লোর, ১৪ তলা আবাসিকসহ মোট ১৭ তলা) ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয়। তবে পাহাড় না কাটাসহ ৮৭টি শর্ত দিয়েছিল সিডিএ। এসব শর্তের কোনোটিরই তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

সিডিএর অন্যতম শর্ত ছিল, পাহাড় কাটা যাবে না। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, রঙিন টিনের বেশ উঁচু ও বড় বেষ্টনী দিয়ে পাহাড় কেটে ভবন তৈরি করা হচ্ছে। আট মাস আগে পাহাড়টি দৃশ্যমান ছিল। এখন পর্যন্ত পাহাড়টির অর্ধেক অংশ কাটা হয়েছে। পাহাড়ের বাকি অংশ কেটে আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে জোরেশোরে। দিনে চুপচাপ থাকলেও রাত গভীর হলে শুরু হয় পাহাড় কাটা।

পাহাড় কাটার বিষয়ে স্বপ্লীল আবাসনের নির্মাণকাজে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার তুহিন রায় চক্রবর্তী এবং জমির মালিকানায় সম্পৃক্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সজল চৌধুরীর সঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে বেশ কয়েকবার মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁরা সাড়া দেননি। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি।

একসময় সরব, এখন নীরব: ২০২০ সালের ১ জুন আসকার দীঘির পাড়ের এ পাহাড় কাটার দায়ে দুজনকে জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ২৮ হাজার বর্গফুট পাহাড় কাটার কারণে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী। পাহাড়ের কাটা অংশ আগের অবস্থায় ভরাট করতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেটা করা হয়নি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (চট্টগ্রাম মহানগর) মোক্তাদির হাসান বলেন, ‘ওই জমি বাড়ি হিসেবে রেকর্ড হওয়ায় আমরা একটু বেকায়দায়। তারপরও পাহাড় কাটার বিষয়টি দৃশ্যমান হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ৫ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে।’

গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল চসিক। কিছুদিন পর আবার তা শুরু হয়। এরপর সিটি করপোরেশনকে আর মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড় কাটা ও ভবন নির্মাণের বিষয়গুলো সিডিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এখতিয়ারে।

এরপরও বিষয়টি আলোচিত হওয়ায় আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। বর্তমানে কী অবস্থায় আছে, তা খতিয়ে দেখছি।’

নথিতে শুভঙ্করের ফাঁকি: ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ৯২ জনের নামে জমিটির নামজারি হয়। সিডিএতে জমা দেওয়া নথিতে দেখা যায়, জমিটি বাড়ি হিসেবে লিপিবদ্ধ। অথচ ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এবং ২০১০ সালের সংশোধিত আইন অনুসারে এটি পাহাড়। আর এই আইন অনুসারে পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে এই জায়গায় ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যেতে হাইকোর্টে রিট করে আদেশ এনেছেন জমির মালিকেরা। তবে ওই রিটে এটা উল্লেখ করা হয়নি, জায়গাটিতে পাহাড় আছে। ওই রিটে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, প্রধান প্রকৌশলীসহ ৮ জনকে বিবাদী করা হলেও বাদ রাখা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরকে। সিডিএর একটি সূত্র বলছে, পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে এই পাহাড় সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারে।

একই বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মুনিরা পারভীন রুবা বলেন, ‘এ পাহাড় কাটা বন্ধ করতে আমরা স্মারকলিপি, মানববন্ধন এবং সর্বশেষ লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি উল্লিখিত আবাসনসংশ্লিষ্টদের; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’

সিডিএ কার্যালয়ের আরেকটি সূত্র বলছে, কর্তৃপক্ষ চাইলে পাহাড় কাটার দায়েই ভবনের পরিকল্পনা বাতিল করতে পারে। তবে অজানা কারণে সেটা হচ্ছে না। যদিও সিডিএর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়ে আমরা অবগত। কিন্তু ওই জায়গায় সিডিএর হস্তক্ষেপ না করতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে আমরা আপাতত কিছু করতে পারছি না। পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। তবে ভবন হয়ে যাওয়ার পরও সিডিএর সংশ্লিষ্ট আইনে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল সংস্থার

ভারত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিকশাচালকের সঙ্গে তর্ক, বাংলাদেশিকে ফেরত

চীনের আগে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস: দ্য হিন্দুকে প্রেস সচিব

আকরামদের প্রথম খবর দেওয়া হয়েছিল, তামিম আর নেই

ভারতকে ভয়ংকর মাদক ফেন্টানিলের কাঁচামাল সরবরাহকারী বলল তুলসী গ্যাবার্ডের দপ্তর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত