Ajker Patrika

কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত চিকিৎসকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ১০
কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত চিকিৎসকের মৃত্যু

চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত দন্ত চিকিৎসক কোরবান আলী (৬০) মারা গেছেন।

আজ বুধবার ভোর ৬টার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হামলার পর গত ছয় দিন তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঈদ আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে কোরবান আলীর পরিবারে। 

এ ঘটনায় গত শনিবার ছেলে আলী রেজা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আকবর শাহ থানায় মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন মো. সামির, মো. রিয়াদ, সোহেল ওরফে বগা সোহেল, মো. আকিব, মো. অপূর্ব, মো. নিশান, মো. রাজু, মো. সাগর, মো. বাবু, মো. রাজু, মো. সংগ্রাম ও মো. সাফায়েতের নাম উল্লেখ করেন বাদী। 

এ ছাড়া আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে রাখা হয়। এলাকায় তাঁরা স্থানীয় যুবলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ নিশান আবার স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জমিস ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারি হিসেবে পরিচিত। 

গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. সাগর, মো. সংগ্রাম ও মো. সাফায়েত নামে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনজনকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।’ 

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ৫ এপ্রিল বিকেলে আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ হাউজিং এলাকার জে লাইন দিয়ে যাচ্ছিলেন কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা। তখন দুজন স্কুলছাত্র তাঁর সাহায্য চায়। তাদের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মারধর করছিল। এ সময় আলী রেজা ৯৯৯-এ পুলিশকে কল দেন। পুলিশ এসে কিশোর গ্যাংয়ের একজনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় ইফতারি কিনতে বের হন আলী রেজা। তাঁকে একা পেয়ে মারধর করতে থাকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। 

খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন তাঁর বাবা কোরবান আলী। একপর্যায়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ইট দিয়ে আঘাত করেন কোরবান আলীকে। মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। প্রথমে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে নগরীর বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কোরবান আলী সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের কবিরুল ইসলামের ছেলে। 

পরিবার নিয়ে তিনি পশ্চিম ফিরোজ শাহ কলোনির গ্রিন টাওয়ারে থাকতেন। নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় তাঁর একটি ডেন্টাল ক্লিনিক ছিল। 

কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন বাবা। বাবাকে ওরা বাঁচতে দিল না। ওরা আবারও আমাকে মারতে আসলে কে আমাকে বাঁচাতে আসবে?’ 

চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার ফাজিল শিক্ষার্থী আলী রেজা। কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন বাবা কোরবান আলী। একই শঙ্কা আলী রেজার মা পারভীর আক্তারেরও। স্বামীকে হারিয়েছি। আমার ছেলের কী হবে? 

নিহত কোরবান আলীর মামাতো ভাই সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘একজন মানুষকে দিনদুপুরে পিটিয়ে মারা হলো। কোন সমাজে আছি আমরা? এর বিচার কি হবে?’ 

এদিকে ময়নাতদন্তের জন্য কোরবান আলীর মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার পর পূর্ব ফিরোজ শাহ এলাকায় প্রথম জানাজা এবং দ্বিতীয় জানাজা গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সেখানে লাশ দাফন করা হবে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীতে অন্তত ২০০ কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেক দলে রয়েছে ৫ থেকে ১৫ জন। পুলিশের হিসাবে, নগরজুড়ে এসব গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা অন্তত ১ হাজার ৪০০। 

পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশ্রয় দিচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাউন্সিলর। গত ছয় বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত বলে জানায় পুলিশ। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত