বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। আগের সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এবার হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে দুই দিন আগে ভোট হয়ে যাবে। কারণ, আওয়ামী লীগ জনগণ এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। নির্বাচন আসলে আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্র করে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তারা নানা ষড়যন্ত্র করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতায় এসেছিল। সামনের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করবে। এদের জনগণ বিশ্বাস করে না। জনগণও আওয়ামী লীগের অধীনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।’ 

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর মানিকপুর গ্রামের বাসভবনের সামনে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 
 
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আওয়ামী লীগেরই ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ দুবার ক্ষমতায় এসেছিল। এখন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আওয়ামী লীগের ভয় কিসের, বলুক না। যদি নিরপেক্ষ ভোট হয়, নোয়াখালীতে একটি আসনও আওয়ামী লীগ পাবে না। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে। যদি এ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি পাবেন। সকলে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আমাদের আন্দোলনে বিজয় ইনশাআল্লাহ সুনিশ্চিত।’ 

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় (স্যাংশন) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতা-কর্মীরা চুপ হয়ে গেছে। নৌকার যে জোয়ার এসেছিল, তা এখন ডোবার সময় এসে গেছে। এখন জোর করে আর ভোট নিতে পারবে না। যেখানে নৌকা, জনগণ সেখানেই প্রতিরোধ করছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে গণতন্ত্রের বিজয় আনতে চাই। কিন্তু প্রশাসনকে অনৈতিক ব্যবহার করলে, অনুরোধ করে বলব, পুলিশ, র‍্যাব, প্রশাসনের ভাইয়েরা—আওয়ামী লীগের দলীয় হয়ে সরকারের গণবিরোধী কোনো কাজ করবেন না। যদি আওয়ামী লীগের নির্দেশে দলীয়ভাবে কাজ করেন, আমেরিকার স্যাংশনের বিষয় তো জেনেছেন—ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি সাহেবদের খবর আছে কিন্তু।’ 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সহধর্মিণী বেগম হাসনা জসীমউদ্‌দীন মওদুদ বলেন, ‘এই সরকারের আমলে নোয়াখালীতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। নোয়াখালীতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের আমলে হয়েছে। নোয়াখালীর মানুষ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, তাদের বাসস্থানের জন্য। কিন্তু নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে নদীভাঙনকবলিত মানুষের জন্য কোনো বাসস্থানের ব্যবস্থা করেনি। 

‘হাসিনা সরকার বিদেশিদের বড় বড় গলায় বলে, আমরা এ দেশের একটা লোককেও না খেয়ে মরতে দিইনি। এটা সঠিক কথা নয়, দেশের মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের মধ্যে আছে। ব্যারিস্টার মওদুদ ছিলেন আওয়ামী লীগের ভয়ংকর রাজনৈতিক শত্রু। এ সরকারের সব বাজেটগুলো গরিব মানুষকে মারার বাজেট। বড় লোক ও লুটেরা বানানোর আওয়ামী বাজেট। আমেরিকা বলেছে, যদি কেউ নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেয়, তাদের আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।’ 

সভায় প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, ‘পুলিশ কবিরহাটে মওদুদ আহমদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ সরকার সকলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করে কী ধরনের প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়।’ 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান রিপনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সহধর্মিণী বেগম হাসনা জসীমউদ্‌দীন মওদুদ, ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাসুদ, প্রকৌশলী হানিফ, কবিরহাট বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, আবদুর রহিম চেয়ারম্যান, অ্যাডভোকেট আজম খান, মমিন বাহার, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নেত্রী জোসনা বেগম, জাসাস নেতা অধ্যাপক শেখ সাদি বাবু, মাস্টার ওবায়দুল হক, আবদুল হাই, বেলায়েত হোসেন, কবির আহম্মদসহ জেলা-উপজেলার নেতারা।