ঐতিহ্যবাহী ওয়ার্ডে হকারের উৎপাত

নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২১, ১২: ০০
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২১, ১৫: ৫৭

ইতিহাস, ঐতিহ্যে ভরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ছোট্ট একটি ওয়ার্ড ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা। এক বর্গ কিলোমিটারেরও কম আয়তনের এই ওয়ার্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মোগলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের ইতিহাস। একসময় এই কিল্লা ছিল মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খাঁ’র ছেলে উমেদ খাঁ মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের পরাজিত করে কেল্লার অন্দর বা ভেতরে প্রবেশ করেন। সে থেকে এই কিল্লার নাম হয় আন্দরকিল্লা। চট্টগ্রাম বিজয়য়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে  শায়েস্তা খাঁয়ের পুত্র উমেদ খাঁ আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ নির্মাণ করেন।

বইপাড়া ও ছাপাখানার জন্য শহরে অদ্বিতীয় এই ওয়ার্ড। এখানে ২.৭০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত লালদীঘির পাড়ে সকাল-বিকেল মানুষ হাঁটাহাঁটি করেন। ওয়ার্ডে ৪ টি পোশাক কারখানা, ১টি আইন কলেজ, ১ টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১টি কামিল মাদ্রাসা, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একাধিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, চট্টগ্রাম আদালত ভবন, বাংলাদেশ ব্যাংক, জিপিও, হকার্স মার্কেট, লালদীঘি মাঠ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রাইফেল ক্লাব, কেন্দ্রীয় কারাগার, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট প্লাসিডস হাই স্কুল, বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরি, আমানত শাহ (র.) মাজার, রেজিস্ট্রি অফিস, মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর, সিডিএ ভবন, বিপণি বিতান ও বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ছাড়াও রয়েছে সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগরের চালু করা ‘জব্বারের বলী খেলা’ ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি মাঠে প্রতিবছর ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে বৈশাখী মেলাও চলে। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য আছে আরবান হাসপাতাল ও সিটি করপোরেশন মাদানী হাসপাতাল।

সরেজমিনে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের হাজারি গলি, বই মার্কেট, সিনেমা প্যালেস, কোতোয়ালি মোড়, ডিসির বাংলো, কোর্ট বিল্ডিং, হকার মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আয়তনে ছোট হলেও এখানে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। পুরো এলাকা বলতে গেলে হকারদের দখলে। জহুরুল হক হকার মার্কেটে ৮৭৪টি দোকান থাকলেও পরীর পাহাড়ের চারপাশ ঘিরে রেখেছে হকার। ওষুধের জন্য বিখ্যাত হাজারী গলির প্রবেশ মুখও হকারের দখলে। এ ছাড়া ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ময়লার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

আইয়ুব আলী নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, হকারের উৎপাত বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ময়লা আবর্জনা কয়েক দিন পড়ে থাকলেও কারও নজরে আসে না। এ ছাড়া আন্দরকিল্লা মসজিদের সংস্কার না করায় মুসল্লিদের অনেক কষ্ট হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সুজয় মহাজন বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। রাস্তাগুলো অনেক সরু। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। মেরেন্ডা লেন পুকুর, রগুনাথ বাড়ি পুকুর, বদর নূর পুকুরের অবৈধ দখল মুক্ত করে সংস্কার করলে এলাকার উপকার হবে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, একাধিক সেবাধর্মী সরকারি–বেসরকারি অফিস ও স্থাপনার কারণে আন্দরকিল্লা এলাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যে কোনো অপরাধ দমনে তৎপর রয়েছি। কিশোর অপরাধ তেমন নেই। হকার উচ্ছেদে কাজ করছি।

৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ‘আমার এলাকায় প্রধান সমস্যা হকার আর পানি। পানির সমস্যা নিরসনে ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে একাধিক লাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু হকারদের শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে কিংবা হকার বসা বন্ধ করতে সফল হচ্ছি না। জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড গঠনে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মুসলিম হল, বিভাগীয় লাইব্রেরি আধুনিকায়ন ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকেও দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে।

তিনবার নির্বাচিত এই কাউন্সিলর আরও বলেন, আন্দরকিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে আন্দরকিল্লায় তিনটি কিল্লা তৈরি করব। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে  প্রণোদনা দিয়ে এবং কর কমিয়ে হলেও সবগুলো ভবনকে যেন একই রঙের করা যায় সে চেষ্টা করছি। লালদীঘিকে দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তুলেছি। এখানে তৈরি করা হয়েছে ওয়াকওয়ে, ম্যুরাল, ছয় দফা মঞ্চ। শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য বড় পর্দার টেলিভিশনে কার্টুন ছবি সহ প্রচার করা হবে বিশ্বকাপের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খেলা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত