নুসরাতের মৃত্যুবার্ষিকীতে সোনাগাজীতে ইফতার ও দোয়া

সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ০৯
Thumbnail image

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া ও ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। আজ সোমবার তাঁর বাড়ি ও স্থানীয় মসজিদে দোয়া ও ইফতারের আয়োজন করা হয়। নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আজকের পত্রিকাকে একথা জানান। 

২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাফি। এ ঘটনায় নুসরাতে ভাই থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় একই বছরের ২৪ অক্টোবর ফেনীর একটি আদালত ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। 

মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, মামলার রায়ের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করে অপপ্রচার করছে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আত্মীয়স্বজনেরা। যে কারণে আমরা আতঙ্কে থাকি। আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন উচ্চ আদালতে। আমাদের প্রত্যাশা আপিল বিভাগে নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকবে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রভাষক আফসার উদ্দিনের স্ত্রী সুরাইয়া হোসেন ও কামরুন নাহার মনির স্বামী রাশেদ খান রাজু বলেন, নুসরাতের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার সময় পুরো সোনাগাজী পৌরসভা এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় আওতায় ছিল। সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ করত পৌরসভা ও মডেল থানা কর্তৃপক্ষ। এমনকি ফাজিল মাদ্রাসার সামনে তিনটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তদন্ত সংস্থা সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নির্দোষ মানুষদের ফাঁসিয়েছে। 

বিচারের সময় আদালতে আমাদের আইনজীবী সিসি ফুটেজ হাজির করার আবেদন করলে বিচারকের আদেশের পরও থানা ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে সিসি ফুটেজ হাজির করেনি। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের ভাই আবুল কাশেম বলেন, ‘মামলার বাদী, ভিকটিমের পরিবারের সদস্যসহ ৮৭ জন সাক্ষীর কেউ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। এমনকি মামলার তদন্তকারী দুই কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন ও পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলম আদালতে স্বীকার করেছে তাদের তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে রুহুল আমিনের সংশ্লিষ্টতা পায়নি। শুধুমাত্র আবেগের উপর ভিত্তি করে রায় প্রদান করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলাটি পুন:তদন্তের ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি খালেদ হোসেন দাইয়ান বলেন, নুসরাত পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ তাদের বাড়িতে সার্বক্ষণিক অবস্থান করছে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনেরা নুসরাতের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তাদের আবেদন আমলে নিয়ে চিঠি দিয়ে নুসরাত পরিবারকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের অনুরোধ করেন। তবে দীর্ঘদিন পার হলেও তারা তাদের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেননি।

২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির। পরিবারের অভিযোগ অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৪ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান। পরিবারের মামলার পর তদন্ত সংস্থা পিবিআই ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করে। একই বছরের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। 

আসামিরা হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি, আব্দুর রহিম শরীফ , ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, মহিউদ্দিন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত