Ajker Patrika

চৌদ্দগ্রামে ২১ মাসে ৫০ আত্মহত্যা, অধিকাংশ প্রবাসীর স্ত্রী

মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) 
চৌদ্দগ্রামে ২১ মাসে ৫০ আত্মহত্যা, অধিকাংশ প্রবাসীর স্ত্রী

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ২১ মাসে ৫০ নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন। নারী ২৭ জন। এসব ঘটনায় ৫০টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনা সময়ে আর্থিক সংকট ও পারিবারিক কলহের কারণে এ সকল ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের দাবি, অধিকাংশ ঘটনা প্রেম সংক্রান্ত।

থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে চৌদ্দগ্রামে কীটনাশক পানে ৬ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলা, ফাঁসিতে ঝুলে ৮ জন পুরুষ, ১২ মহিলা এবং অজ্ঞাত কারণে ৩ পুরুষ আত্মহত্যা করেন। ২০২১ সালের ৯ মাসে কীটনাশক পানে ৩ নারী, ফাঁসিতে ঝুলে ৬ নারী, অজ্ঞাত কারণে ৩ নারী এবং কীটনাশক পানে ১ পুরুষ, ফাঁসিতে ঝুলে ৩ পুরুষ ও অজ্ঞাত কারণে ২ পুরুষ আত্মহত্যা করেন।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, বিশ্বের মধ্যে জাপানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। কারণ-তারা সব সময় নিজের কর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ফলে তারা নিজেদের সুখ দুঃখগুলো ভাগাভাগি করতে না পারার কারণে ক্ষোভে আত্মহত্যা করে। চৌদ্দগ্রামেও অধিকাংশ আত্মহত্যা একাকিত্ব, প্রেম সংক্রান্ত এবং পারিবারিক কলহের কারণে ঘটেছে। আত্মহত্যা করা নারীদের মধ্যে প্রবাসীদের স্ত্রী বেশি বলে তিনি দাবি করেন। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে এ সকল আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। 

এ বিষয়ে কথা হয় এনজিও সংস্থা ফ্রিডম উই দিন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইকোথেরাপিস্ট নাসিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে ৭০ ভাগ লোক আত্মহত্যা করার আগে বিভিন্নভাবে তাঁদের হতাশার কথাগুলো তুলে ধরে অভিমত ব্যক্ত করে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অনেকে ইদানীং তার হতাশার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। আমরা এ সকল বিষয়গুলো গুরুত্ব দেই না। কিন্তু তিনি তার মনের কথাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে যাচ্ছে। আমরা যদি তার মনের কথাগুলো বুঝতে পেরে তার পাশে দাঁড়াই তাহলে হয়তো এ ব্যক্তি আর আত্মহত্যা করত না। এভাবেই তিনি তার আশপাশের লোকগুলোকে তাঁর মনের হতাশার বিষয়গুলো তুলে ধরে জানান দিচ্ছে। বাকি ৩০ ভাগ লোক সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক এবং হতাশার কারণে তাৎক্ষণিক আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ সকল ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সিনিয়র অধ্যাপক ড. জলিল চৌধুরী জামাল বলেন, ‘উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা আছে। আমাদের দেশে পারিবারিক নিপীড়ন, করোনাকালীন আর্থিক সংকট, ভুমি সংক্রান্ত, প্রবাসের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা এবং জীবনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়াসহ নানা কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। আমাদের সমাজে ইদানীং আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধ করতে হবে। লক্ষ্য করে দেখবেন, যে সকল ব্যক্তিরা আত্মহত্যা করছে, তাঁরা তার আগে আমাদের নানাভাবে বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। আমরা তাঁর মনের কথাটি বুঝতে পারিনি বলেই ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করছে। অনেকে প্রবাসে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরিতে অর্থনৈতিকভাবে লোকসান, দাম্পত্য জীবনে অসুখী এবং পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত ঘটনাগুলোকে পুঁজি করেই আত্মহত্যা করে থাকে। আমরা যদি এ সকল ব্যক্তিগুলোর মনের ভাবটা বুঝে তাঁদের পাশে দাঁড়াই তবেই এ সকল আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব।’ 

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সময় অনেক নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। যেহেতু হাসপাতালে কীটনাশক সেবনকারীদের উন্নত কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই, তাই আমরা কীটনাশক পানকারী অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। ইদানীং কীটনাশক পানকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত