Ajker Patrika

বিনা অপরাধে কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে বেওয়ারিশ লাশ হলেন সেই মিনু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২১, ১৬: ১৩
বিনা অপরাধে কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে বেওয়ারিশ লাশ হলেন সেই মিনু

চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার লিংক রোডের সংযোগ সড়কের পাশ থেকে গত ২৯ জুন ভোরে এক নারীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পায় পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, দ্রুতগামী একটি ট্রাক তাঁকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এক দিন পর বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন করা হয় তাঁকে। তবে এ ঘটনায় করা মামলায় তদন্ত চালিয়ে যায় পুলিশ। বেরিয়ে আসে তাঁর নাম-পরিচয়। গতকাল শনিবার বিকেলে পুলিশ নিশ্চিত হয়, মরদেহটি চট্টগ্রাম কারাগারে অন্যের বদলে সাজা খাটা আলোচিত সেই মিনু আক্তারের। 

মিনু একটি খুনের মামলায় কুলসুম আক্তার নামের অন্য এক নারীর হয়ে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছিলেন। তিন বছর জেলে থাকার পর আদালতের নির্দেশে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। মুক্তির ১২ দিন পর ট্রাকচাপায় এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হলো তাঁর।

পুলিশ আর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তির পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ৩১ বছর বয়সী মিনু। ছিলেন সীতাকুণ্ডের ছিন্নমূল মানুষের বসতি এলাকায় ভাই রুবেলের আশ্রয়ে। দুর্ঘটনার দিন সকালে ঘর থেকে বের হন। রাতে বায়েজিদের সড়কে নেমে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছোটাছুটি করছিলেন। এ সময় একটি ট্রাক চাপা দিয়ে চলে যায়।

বায়েজিদ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি নিহত নারী কারাগারের সেই মিনু আক্তার। ঘটনার দিন রাতে বায়েজিদের লিংক রোডের আগে সানমারের বিপরীত রাস্তায় এদিক–সেদিক ছোটাছুটি করছিলেন তিনি। আমাদের টহল দল তাঁকে দুবার রাস্তা থেকে সরিয়ে পাশের ফুটপাতে এনে দিয়েছিল। পরে গভীর রাতে সড়কে নেমে আবারও দৌড়াদৌড়ি করতে গেলে একটি দ্রুতগতির ট্রাক তাঁকে চাপা দেয়।’

মিনু সব গুছিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে আবারও নতুন জীবন শুরু করবেন—এমনই আশা ছিল ভাই মো. রুবেলের। এ জন্য বোন আর তাঁর দুই ছেলেকে আশ্রয়ে রেখে সহায়তা করছিলেন তিনি। দরিদ্র রিকশাচালক হলেও বোনের ভাগ্য গড়ার চেষ্টায় আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না তাঁর।

কান্নাচাপা কণ্ঠে রুবেল বলেন, ‘ঘটনার চার দিন পর যখন জানলাম ট্রাকচাপায় নিহত নারীটি আমার বোন, তখন বুঝলাম সে কতটা অভাগী। এত বছর কষ্ট করে, এত অন্যায় সহ্য করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েও আমার বোনটা সুখী জীবন পেল না। তার দুই ছেলে আছে। তারা মাকে ফিরে পেয়ে অনেক আনন্দে ছিল। এখন আমি তাদের কীভাবে মায়ের মৃত্যুর কথা জানাব।’

মর্জিনা আক্তার নামের এক নারী ২০১৮ সালের রমজান মাসে জাকাতের টাকা ও সন্তানদের ভরণপোষণ দেওয়ার কথা বলে মিনুকে ডেকে নিয়ে যান। পরে জানা যায়, তিনি কারাগারে আছেন। পিতৃহারা সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে মিনু অন্য নারীর সাজা ভোগের এমন আত্মঘাতী চুক্তিতে রাজি হয়েছিলেন বলে জানান তাঁর ভাই রুবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত