পাটপণ্য রপ্তানি শুরুর মাধ্যমে পাট খাত আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উৎপাদন পরিদর্শন ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ সময় কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি জুট মিলসের উৎপাদিত পাটপণ্য রপ্তানি শুরুর মাধ্যমে পাট খাত আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস লিমিটেডকে ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) মিলগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এসব মিলে নতুন করে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বস্ত্র ও পাটসচিব মো. আব্দুর রউফ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, জহির আহমদ চৌধুরী, আকতার হোসেন খান, ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদারসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

পাটমন্ত্রী বলেন, কেএফডি জুট মিলটি বর্তমানে ৪০০ শ্রমিকের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে ১০ টন পাটপণ্য উৎপাদন করছে। ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ এ পর্যন্ত ১৩০ টন পাটজাত পণ্য ভিয়েতনাম, তিউনিসিয়া ও চীনে রপ্তানি করছে। এ ছাড়া প্রায় ৬০০ টন পাটপণ্যের অর্ডার শিপমেন্টের অপেক্ষায় আছে। ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ আরও দুটি উৎপাদন ইউনিট আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালু করতে যাচ্ছে। ফলে প্রচলিত ও বহুমুখী পাটপণ্য মিলে দৈনিক গড়ে ১০০ টন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আশা করছি, এখানে ৩ হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস লিমিটেড ও চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিলস লিমিটেড লিজ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেওয়া হয়েছে। মিলটিতে এরই মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৩টি জুট মিলের জন্য দ্বিতীয় ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ১৮টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রস্তাবসমূহ দ্রুত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

পাটমন্ত্রী বলেন, পাটপণ্য রপ্তানি করে আয় বাড়বে। নতুন করে এসব মিলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এ ক্ষেত্রে অবসানকারী শ্রমিকেরা অগ্রাধিকার পাবেন। সরকারি সিদ্ধান্তে পাটকলসমূহের বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান ও পাট খাত পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে গত ১ জুলাই ২০২০ তারিখ থেকে বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি জুট মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৫টি জুট মিলের সব স্থায়ী শ্রমিকের গ্র্যাচুইটি, পিএফ, ছুটি নগদায়নসহ সমুদয় পাওনা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

শ্রমিকদের দাবি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মামলা নিষ্পত্তি/প্রত্যাহারজনিত স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা, অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকারী স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা এবং মিল চলাকালীন ৬৪ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি বাবদ ৯২ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পাওনা, কাঁচা পাট ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা এবং স্টোর সরবরাহকারী, সংশ্লিষ্ট ক্যারিং সরবরাহকারীদের পাওনাসহ মোট ৫৭৪ দশমিক ১৪ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।