Ajker Patrika

সকালে মাদ্রাসায় দিয়ে রাতে এসে পেলেন ছেলের লাশ

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
সকালে মাদ্রাসায় দিয়ে রাতে এসে পেলেন ছেলের লাশ

প্রতিদিন ভোরে দশ বছর বয়সী সাবিব সায়ানকে মাদ্রাসায় দিয়ে ব্যবসায়িক সারাদান কাজ-কর্ম শেষে রাতে আবারও ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরতেন মশিউর রহমান চৌধুরী। কিন্তু গতকাল সোমবার রাত ছিল ব্যতিক্রম। এদিন রাতে মাদ্রাসায় গিয়ে মশিউর ছেলেকে ডাক দিলেও কেউ সাড়া দেয়নি।

অনেকক্ষণ সাড়া না পেয়ে মাদ্রাসার এক হুজুরকে ফোন দেন মশিউর। তখন ওই হুজুর সবাইকে সঙ্গে নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন। শেষে মাদ্রাসার একটি টয়লেটে ছেলেটির ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মশিউর রহমান চৌধুরী।

সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। সাবিব মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সাবিবের বাবা মশিউর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর দামপাড়ার ২ নম্বর পল্টন রোডে আবদুল কাদের টাওয়ারে থাকতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। 

মশিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে মেয়ে। বড় ছিল সাবিব। ২০২০ সালে ডিসেম্বরে তাঁকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করি। এত বছর সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ এসব কীভাবে হয়েছে কিছু বুঝতে পারছি না। পরিবারের কারও সঙ্গে মান অভিমানও ছিল না। বাসায় ফিরলে দুই ভাই-বোন মিলে সারাক্ষণ দুষ্টুমি করত। মাঝে মধ্যে দুই ভাইবোনের ঝগড়া হলে বকাবকি করতাম। কিছুক্ষণ পর আবার হাসিখুশি থাকত। মাকে জড়িয়ে ধরত। আমার এতটুকু ছেলে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না।’ 

চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া ছাত্র সাবিব সায়ান (১০)দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ ফোরকান মনজুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসা প্রতিদিন রাত ৯টা ১০ মিনিটে ছুটি হয়। প্রতিদিন সাবিবের বাবা এসে তাঁকে নিয়ে যেত। সোমবারও যথারীতি তার বাবা তাকে নিতে আসে। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সাবিবের বাবা আমাকে ফোন দেয়। আমি কয়েকজন ছাত্রকে পাঠিয়ে সাবিবকে খুঁজতে বলি। সাবিব যে ক্লাসে পড়ছিলেন ওই হুজুরকে বিষয়টি জানাই। ওই হুজুর বলেছেন, রাত ৮টা ৪০ মিনিটে সাবিব টয়লেটে যাবে বলে ক্লাস থেকে বের হয়েছিল। টয়লেটে গিয়ে তাকে খুঁজলে দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর সাড়া না পেয়ে দরজাটি ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। পরে সাবিবকে প্যান্টের বেল্টে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ম্যাক্স হাসপাতাল ও পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমরা পুলিশকে একই বিষয় জানিয়েছি। তাঁরা আমাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। পরে ছেড়ে দেন।’

মরদেহ হাসপাতালে আনার পর ঘটনাস্থলে থাকা মশিউরের বন্ধু নাজমুল হুদা শিপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দশ বছর বয়সী এতটুকু ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে বলে বিশ্বাস হয় না। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। 

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা চমেক হাসপাতাল থেকে ছেলেটির মরদেহ উদ্ধার করি। এর আগে তাকে পরিবার ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের লোকজন হাসপাতালে এনেছিল। ছেলেটির গলায় গোলাকার দাগ পাওয়া গেছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সন্দেহজনক কিছু পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শফিউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মরদেহ পরীক্ষা ও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন এম এ জি ওসমানীসহ ৮ জন

কনের বাড়িতে প্রবেশের আগমুহূর্তে হৃদ্‌রোগে বরের মৃত্যু

বগুড়ায় মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ছাদ থেকে পড়ে নার্সিং শিক্ষার্থীর মৃত্যু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত