মৃত চিকিৎসকের নামে রিপোর্ট: শেভরন ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ২২: ৪০

আট বছর আগে মারা যাওয়া চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট দিত চট্টগ্রামের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দীর্ঘদিন ধরে রোগীর কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্সেরও মেয়াদ নেই। এসব বিষয় লিখে শেভরনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন। এক মাস আগে চিঠি দিলেও, শেভরনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে এখনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

 ‘শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি (প্রা.) লিমিটেডের নানা অনিয়ম, ‍দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী সই করা ওই চিঠিটি দেওয়া হয় গত ১০ সেপ্টেম্বর। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়ম–দুর্নীতি স্বাস্থ্য বিভাগের ‘সম্মান দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করায় স্বাস্থ্য বিভাগ চরম বিব্রত ও মর্মাহত’ বলে উল্লেখ করা হয়। 

সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত ও অনুসন্ধান করে শেভরনের বিরুদ্ধে বেশকিছু অনিয়ম ও দুর্নীতি পায় সিভিল সার্জন অফিস। সেসব বিষয় উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ডা. এ এম গোলাম মর্তুজার নামে লাইসেন্স করা। তিনি দুই বছর আগে মারা গেছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে লাইসেন্স নবায়নের আবেদনে ওই ব্যক্তির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব বেড়ে যাওয়ার পর সরকার ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিলেও, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের নির্দেশনা মানেনি। অতিরিক্ত ফি আদায় করার বিষয়টি হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া যায়। 

আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমান উল্লাহকে ভুল রিপোর্ট দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় সিভিল সার্জনের চিঠিতে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, পেটব্যথা নিয়ে তিনি একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন চিকিৎসক পরীক্ষার করতে বলায়, শেভরনে পরীক্ষা করান ওই রোগী। রিপোর্টে তাঁর এপেন্ডিসাইটিসের সমস্যা বলে জানানো হয়। 

অপারেশন করার আগে, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বাইরের দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে, রিপোর্টে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার কথা বলা হয়। চিকিৎসকেরা শেভরনের রিপোর্টে ভুল বলে উল্লেখ করেন। 

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. রেজাউল করিম মারা গেছেন আট বছর আগে। অথচ এখনো তাঁর নাম ব্যবহার করে হৃদরোগ সংক্রান্ত ইকো–কার্ডিয়োগ্রাফির রিপোর্ট দিচ্ছে শেভরন। এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সিভিল সার্জন। 

কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, রোকেয়া বেগম নামের ৫৮ বছর বয়সী এক রোগী শেভরনে যান। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শে ইকো–কার্ডিওগ্রাফি করান। ডা. মো. রেজাউল করিমের নাম ব্যবহার করে গত ২৬ আগস্ট রিপোর্টটি দেওয়া হয়। অথচ রেজাউল করিম ২০১৫ সালে ২২ জুন মারা গেছেন।

নোটিশে আরও বলা হয়, ডা. মো. রেজাউল করিমের নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর ছাড়া রিপোর্ট দেওয়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন–২০০৯–এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বা চিকিৎসকের ভুয়া নাম ও পদবি ব্যবহার বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন–২০১০–এরও পরিপন্থী। 

এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক পুলক পারিয়ার সিভিল সার্জন অফিসকে জবাব দেন। তবে জবাব সিভিল সার্জন অফিসের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেভরনের মহাব্যবস্থাপক পুলক পারিয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখনো কোনো চিঠি পাইনি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও কারণ দর্শানোর উত্তর সিভিল সার্জনকে দিয়েছি। এরপরও সিভিল সার্জন আমাদের না জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। চিঠির বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম।’ 

সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াস চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শেভরনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত