চট্টগ্রামে ৩ ঘণ্টায় ৬ ট্রেনের টিকিট শেষ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ১২: ৪৪
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২২, ১৩: ৪০

অগ্রিম টিকিট দেওয়ার তৃতীয় দিনে তিন ঘণ্টারও কম সময়ে ছয় ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। অন্য দুই দিনের তুলনায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীর চাপ ছিল কয়েক গুণ বেশি। টিকিট পেতে কেউ কেউ আগের রাত থেকে অপেক্ষা করেছেন। টিকিট কালোবাজারি রোধে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক, বিভাগীয় ব্যবস্থাপকসহ ঊর্ধ্বতনেরা স্টেশন পরিদর্শন করেছেন। 

আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে কাউন্টারে ৭ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হয়। অনলাইনেও একই সময়ে টিকিট বিক্রি হয়। যাত্রীর চাপের কারণে সার্ভার ডাউন থাকায় অনলাইনে কেউ কেউ টিকিট কাটতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। 

রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তূর্ণা নিশিতা, সোনার বাংলা, পাহাড়িকা, উদয়ন, মেঘনা ও বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বেলা ১১টায় শেষ হয়ে যায়। যাত্রীর চাপ এত বেশি ছিল, কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করতে অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে আমাদের শক্ত অবস্থানের কারণে সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট বিক্রি করতে পেরেছি।’

জানা যায়, ওই ছয় ট্রেনে প্রায় পাঁচ হাজার টিকিট রয়েছে। কাউন্টারে অর্ধেক ও অনলাইনে অর্ধেক টিকিট বিক্রি হয়।

মো. শামিম হোসেন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরে। গতকাল রাত থেকে তিনি অপেক্ষা করেছেন অগ্রিম টিকিটের জন্য। সবার সামনে থাকায় তিনি টিকিট বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে পেয়েছেন। টিকিট পেয়ে অপেক্ষার কষ্ট ভুলে গেছেন। কারণ চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে।

শামীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানসহ এবার বাড়িতে গিয়ে কোরবানি দেব। চারটি টিকিট পেয়েছি। তবে এর জন্য রাত জেগে অপেক্ষা করতে হয়েছে। টিকিট পেয়ে সব কষ্ট মুছে গেছে। ট্রেনে একদিকে নিরাপদ, আরেক দিকে ঠিক সময়ে যাওয়া যায়। তাই প্রতিবার ট্রেনে করেই বাড়ি যাই।’ 

সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য এসেছেন কামাল উদ্দিন। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আগে থেকে অনেক সহজে টিকিট পেয়েছি। যারা আগে এসেছে সবাই মোটামুটি টিকিট পেয়েছে।’

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এবার ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। বাতিল করা হয়েছে ট্রেন বন্ধের শিডিউলও। ঈদে ছয় জোড়া স্পেশাল ট্রেনও চলাচল করবে। স্পেশাল ট্রেনগুলো হলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটের দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে চাঁদপুর স্পেশাল, একই রুটে চাঁদপুর স্পেশাল-২, জয়দেবপুর-পঞ্চগড়-জয়দেবপুর রুটের পঞ্চগড় স্পেশাল, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটের সোলাকিয়া স্পেশাল-১ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে সোলাকিয়া স্পেশাল-২। 

এর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ও চাঁদপুর স্পেশাল ১ ও ২ ঈদের তিন দিন আগে এবং ঈদের পরদিনসহ পাঁচ দিন চলাচল করবে। পঞ্চগড় স্পেশাল ঈদের তিন দিন আগে ও পরের চার দিন চলাচল করবে। সোলাকিয়া স্পেশাল-১ ও ২ ঈদের দিন চলাচল করবে। 

এদিকে যাত্রীদের সুবিধার্থে ঈদের ছয় দিন আগে থেকে যেসব দিনে ট্রেন চলত না, ওই সব দিনেও ট্রেন চলাচল করবে। তবে ঈদের দিন কোনো আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে না। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। 

এর মধ্যে ১ জুলাই দেওয়া হয় ৫ জুলাইয়ের টিকিট, একইভাবে ২ জুলাই ৬ জুলাইয়ের, ৩ জুলাই ৭ জুলাইয়ের, ৪ জুলাই ৮ জুলাইয়ের ও ৫ জুলাই দেওয়া হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট। ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই স্লোগান বাস্তবায়ন করবে রেলওয়ে। এ জন্য টিকিট কেনার সময় অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মসনদের ফটোকপি সঙ্গে থাকতে হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলসেবা অ্যাপ ও অনলাইন ই-টিকিট সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে। কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাটা যাবে। নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কাউন্টার থাকবে। ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটার পর তা আর ফেরত নেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। ঈদের পর ফিরতি টিকিট বিক্রির তারিখও নির্ধারণ করেছে রেল প্রশাসন। আগামী ৭ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। ৭ জুলাই দেওয়া হবে ১১ জুলাইয়ের টিকিট, ৮ জুলাই ১২ জুলাইয়ের, ৯ জুলাই ১৩ জুলাইয়ের এবং ১১ জুলাই টিকিট দেওয়া হবে ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের। 

এ বিষয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করছি। কোনো অন্যায় কিছু পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেব। টিকিট থাকা শর্তে সবাই যাতে টিকিট পায়, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। এ ছাড়া টিকিট কালোবাজারি রোধে থাকবে জিরো টলারেন্স।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত